পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড ২৭ বাবা আমতা আমতা করে বলেন—তা —ইয়ে—মনে ছিল না । তা নয়—ইয়ে— আমি কান-খাড়া করে পাশের ঘরে বসে সব শুনচি। আমার বুকের মধ্যে চিপ-চিপ করচে । মাখায় রক্ত উঠে যাচ্ছে যেন । জিব শুকিয়ে আসচে। আমি বুঝতে পেরেচি সব। বাবা অত্যন্ত বাস্তবাগীশ লোক, জামাইয়ের অস্থখ-সংবাদে চুপ করে বসে থাকবার মাহুৰ নন । মা ছুটে হাপিয়ে বাবার কাছে এসে বল্পেন—তার কাছে এখুনি চলে যাও। মেয়ের যাবার কথা লেখেনি ? ওকেও নিয়ে যাও— বাবা শুকমুখে বল্লেন-আর সেখানে গিয়ে কি হবে গিন্নী । সব শেষ হয়ে গিয়েচে ! মা মেঝের ওপর আছড়ে পড়লেন আর্ত চীৎকার করে । আমি কিন্তু বেশ সহজ ভাবেই কথাটা শুনলাম কারণ আমি আগেই বুঝতে পেরেচি বাবা কি বলবেন । এইভাবে আমার বিবাহিত জীবনের ইতি হয়ে গেল। কি করবে, আমার অদৃষ্ট । বাবা তো বুড়োহাবড়া স্বামীর হাতে আমায় দেননি, ছোকরা দেখে দিয়েছিলেন, আমার কপালের লেখা, কারো দোষ নেই। আমার কিন্তু বিশেষ কোন দুঃখ নেই মনে । বিশেষ কিছু যে হারিয়েচি, বিশেষ কোন অভাবৰোধ নেই। লোকে বলচে আমার নাকি সর্বনাশ হয়ে গেল । কি সর্বনাশ হলো কিছু বুঝতে পারচি নে। মাছ খেতে পাবো না, না-ই বা পেলাম ; একাদশী করতে হবে, করবো। ভালো খাওয়া বা পরার দিকে আমার কখনো কোন বোক নেই। তবে মানুষটার ওপর মায়। জন্মেছিল বটে। তাকে আর দেখতে পাবো নী, এইটুকু যা কষ্ট । বিধবা হওয়ার পরে আমি অনেকবার শ্বশুরবাড়ী গেলাম । শাশুড়ীর সেবা করি, মুখরা জায়ের সংসারে পুত্রহীন বৃদ্ধার বড় কষ্ট, যত দূর পারি সেটুকু ঘোচাবার চেষ্টা করি। একাদশীর দিন শাশুড়ী-বোঁয়ে নিরন্থ উপোস করি, সন্ধ্যের সময় তার পায়ে তেল মালিশ করি । খুড়শাশুড়ী সর্বদা শোনান, আমি অনুক্ষণে বোঁ, আমায় ঘরে এনেই তার সোনার চা ছেলে, দুধের বাছা মারা গেল । ভাস্করপোর ওপর এমন স্নেহ ভাস্করপোর জীবদ্দশায় কোনোদিন দেখেচি বলে মনে করতে পারলাম না । আশ্চর্য । இ একবার বাপের বাড়ী এসে শুনলাম নস্বমামা বাড়ী ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েচে । ছ’ মাস পরে খবর এল হালিসত্বরের এক কালীমন্দিরে সে আছে, গঙ্গার তীরে ফুখানা ভাঙা মন্দির, সেখানে সে পূজো-আচ্চা নিয়েই নাকি আছে । খবরটা দিলে ও পাড়ার বুধে গয়লার মা, ঘোষপাড়ার দোল দেখে দেশে ফেরবার পথে সে হালিসহরে গিয়েছিল, সেইখানেই দেখা হয়েচে । আমি মনে মনে ভাবলাম ওর পক্ষে ভালোই হয়েচে । কি জানি কেন আমার মনে হয় নক্ষমামা বা করে তাই ভালো । এই ভাবে দিনের পর দিন কাটে। বৃদ্ধা শাশুড়ীকে কত যত্বে আগলে নিয়ে বেড়াই,