পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড ২৯ মন ভেজে না । ঘোর বিষয়ী মন । এ বয়সেও কাটালের ভাগ নিয়ে, সজনে ডাটার ভাগ নিয়ে খুড়শাশুড়ীর সঙ্গে ঝগড়া। আমি বলি—ম, কি হবে আপনার এচড় আর সজনেভাটার চুলচেরা ভাগে । ওর কি সার্থকতা ? ভগবানের নাম করুন। বাতাবী লেবু ফুল ফুটলো ফাগুন মাসে-পথে পথে অপূর্ব স্বগন্ধ ছড়িয়ে । ঘেটুফুলে বঁাশবনের তলা ভর্তি হয়ে গেল। কোকিলের ডাকে মন উদাস হয়ে ওঠে, কত কথা ভাবি ৷ বাল্যকালের কথা, মা-বাবার কথা, স্বামীর কথা-জীবনে কিছু না পেয়েই যেন সব-কিছু পেয়েচি। যদি কোনো হিসাৰী বিষয়ী লোক বলে, কি পেয়েচ, হিসেব দেখাও—হয়তো কিছু দেখাতে পারবো না—কারণ বাইরে আমার অর্ধর্মলিন সরুপাড় ধুতি আর গাছি অতি সরু বিবর্ণ সোনার চুড়ির মধ্যে কেউ কোনো লাভের সন্ধানই খুজে পাবে না, আমার মন বলে কি-এক জিনিসের ঠিকানা মিলেচে, যার দরুন অফুরন্ত আনন্দের ভাণ্ডার আজ আমার কাছে খোলা । অন্য সব কিছু যেন তুচ্ছ হয়ে গিয়েচে । একদিন আমার শাশুড়ী বল্লেন--ও বেীমা, তোমাদের গায়ের একটি ছেলে আমাদের গ্রামে হরি কলুর বাড়ীতে এসে চাকরি করচে। বামুনের ছেলে, দিব্যি চেহারা । কিন্তু বাপু, কলুবাড়ী জল তোলে, গরুর জীব কাটে, এ আবার কেমন কথা ! বডড গরীব বোধ হয়। আমি দেখিনি, কে কাল বলছিল ঘাটে। বল্পে, বৌমার দেশের লোক । ষেদিন শুনলাম, সেইদিনই পথে নক্ষমামার সঙ্গে দেখা । কিন্তু প্রথমটা চিনতে পারিনি । নম্বমামার মাথায় বড় বড় চুল, পরনে শাড়ী, আধ-ঘোমটা দেওয়া, হাতে কাচের চুড়ি, মেয়েলি বেশ, অথচ মুখে ঈষৎ গোফ-দাড়ি । আমার হাসি পেল ওর এই অপরূপ বেশ দেখে। আমার দেখে মেয়েলি স্বরে বল্লে—ও পাচী, ভাল আছিস তো ভাই ? আমি অবাক হয়ে বল্লাম—তোমার এ কি বেশ নম্বমামা ? নক্ষমামা অদ্ভুত হাসি হেসে বল্লে—এই, থাকলেই হলো একরকম । —তুমি নাকি কলুবাড়ী বাসন মাজে, জল তোলো ? — দোষ কি ? -- —তুমি যা ভালো বোঝে । বৃদ্ধ শাশুড়া সেই প্রাবণ মাসে দেহ রাখলেন। দিন-শেক জরে ভুগে গভীর রাত্রে মৃত্যুর কিছু পূর্বে অশ্রুভরা চোখে আমার দিকে চেয়ে বল্পেন—তোমাকে কার কাছে রেখে যাচ্চি মা ? বৃদ্ধার আকুল স্বরে মনে ব্যথা বাজল আমার । তার জরশীর্ণ হাত-ফুটি ধরে বল্লাম-কেন, আমার সোনার চুড়ি আছে, এক বিঘে আমন ধানের জমি আছে-ভাবনা কি মা আমার ? কিছু ভেবো না আমার জন্তে । বিষয়ী লোককে বিষয়ের ভাষায় সাশুনা দিই। আমি জানি ধার কাছে আমি আছি, তিনি আমায় কোনোদিন ফেলবেন না, চরণে স্থান দেবেনই। so নসুমামার সঙ্গে দেখা আবার একদিন । সে একগাদা কাপড় সেদ্ধ নিয়ে ঘাটে যাচ্চে