পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বিভূতি-রচনাবলী ক্ষিপ্রতা সজীবতা আজ যদি না থাকে পাচ-ছাট ছেলেমেয়ের মা মোটাসোটা গিন্নিবান্ত্রি নন্দির মধ্যে সেই বিকচোমুখ রজনীগন্ধাকে যদি খুজে না পায় ?—বিষ্ণু ক্লাস্তিতে চোখ বুজল। ‘ভাক্তার বললে—মশায়; ঘুম পাচ্ছে নাকি ? বালিস এনে দেব ? —না না, এই তো সন্দেবেলা । —রাস্তা হেঁটেছেন কিনা, তাই ৰলছি— —না, ঘুমুৰ না । —তামাক খান ? 歌 —থাক, সেজন্তে ব্যস্ত হতে হবে না । আচ্ছ, এ ছোট্ট গ| আপনার ভাল লাগে ? ডাক্তারবাৰু হেসে বলে উঠল— দেখুন দিকি কাও, ভাল লাগ না লাগার তো কোন মানে হয় না। আমি করি চাকরি, পেটের দায়ে বন্দী—ভাল আমাকে লাগাতে হবে । যেখানে ভাত, সেখানে শাস্তি । — তা তো বটেই। —আগে ভাল লাগত না, এখন সয়ে গিয়েছে। যা হক দু-পয়সা পাই এখানে । আশেপাশের আট-দশখান গ্রামের লোক আমাকেই ডাকে । দু টাকা ফি করেছি আর বর্ষাকালে গরুরগাড়ীর ভাড়া। শীতকালে এখন সাইকেলে যাই । এইসব গ্রামের চাষীরা বছরে যা দেয়, তাতে একটা গোলা ভর্তি হয়ে যায় খাবার সময় বাড়ীর মধ্যে গিয়ে দেখবেন এখন । ভাল কি সাধে লাগে ? স্থল তৃপ্তিবোধে ডাক্তারের ছোট ছোট চোখ আরও যেন বুজে ছোট হয়ে আসে। বিষ্ণুর ভাল লাগে না সেটা। এ ধরণের স্থূল অনুভূতির প্রকাশ তার কাছে চিরকালই বিরক্তিকর। অন্ত কথা পাড়বার চেষ্টায় সে বললে—এ জায়গায় ম্যালেরিয়া কেমন ? —ম্যালেরিয়া খুবই । ম্যালেরিয়াই লক্ষ্মী, আছে বলেই দু পয়স যা হক রোজগার করি। একটি মেয়ে প্রায় বিয়ের বয়সে পা দেব-দেব করছে- সামনের বছর বিয়ে দিতেই হবে। বিষ্ণু নিজের অলক্ষিতে চমকে উঠল। একথা সে জিজ্ঞেস করেনি, জানতেও চায়নি। নন্দির মেয়ে বিবাহযোগ্য হয়ে উঠেছে ! কত বয়স হল, বোল সতের ? না, এইসব পল্লীগ্রামের সমাজে বিবাহের উধ্বতম বয়স তো আত নয়, সে ভুলে যাচ্ছে । তের চোদ্দ বছরের বালিকা হবে বোধ হয়। যাক—সে কথায় তার দরকার কি। অন্য কোন দরকার নয়—নন্দির বর্তমান চেহারা সে বুঝতে চাইছে তার ছেলেমেয়ের সংখ্যার মধ্যে দিয়ে । 動 এমন সময়ে বাইরে থেকে কে ডাকল—ডাক্তারবাবু আছেন ? ডাক্তার উঠে বাইরে গেল। একটু পরে ফিরে এসে বললে—আমাকে যে একবার চাপবেড়ে যেতে হচ্ছে জরুরী কলএ । তাই তো, শক্ত কেস। গরুরগাড়ীতে যাব আসব-তিন চার ক্রোশ দূর হবে।” আমার তো থাকবার জো নেই। ফিরতে শেষরাত। আপনি রইলেন, অামি বাড়ীতে বলে যাচ্ছি, কোন অস্ববিধা হবে না ।