পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও 80 —না না, অসুবিধা কি । —শক্ত কেস না হলে রাত্রে যেতাম না । আপনি শুকনে বেশ স্থজনে গল্প করছিলাম— 彎 —তাতে কি । তা বলে কলএ যাবেন না ? কোন ভাবনা নেই—যান আপনি । —আমি যা হয়েছে দুটো খেয়ে নিই—আপনাকে এরপরে ওরা খাবার দেবে এখন, বাড়ীতে বলে যাচ্ছি। ডাক্তার খানিক পরে সেজেগুজে স্টেথসকোপ নিয়ে গরুরগাড়ীতে বার হয়ে চলে গেল । বিষ্ণুর মনের অবস্থা অন্ত রকম হয়ে গেল ডাক্তার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। নিজেকে সংযত করে রাখা যে এত কঠিন, তা কোনদিন সে ভেবেছিল ? এই বাড়ীতেই নন্দি থাকে, একবার খবর পেলেই সে ছুটে আসবে, ষোল বছর পরে আবার তার সঙ্গে দেখা হবে—এ চিন্তাকে সে প্রাণপণে দমন করে রাখতে চেষ্টা করে । নন্দি তাদের গ্রামের মেয়ে, তার বাল্যসঙ্গিনী, এক বোটায় দুটি ফুলের মত জীবনে অনেক বছর কাটিয়ে এসেছিল । নন্দির সঙ্গে তার বিয়ে হতে পারে না এ সে জানত। তারা ঘোষাল বামুন, নন্দির বাবা নিকষ কুলীন। ঘোষাল না হয়ে চাটুজ্যে মুখুজ্যে হলেও বিশেষ কোন আশা ছিল না তার। তবুও সে চেষ্টা করেছিল । কুমোরপাড়া থেকে হাড়ি কিনে সে ফিরছে—নন্দিদের বাড়ীর সামনের পথ দিয়ে। ওদের বেড়ার গায়ে বড় নিমগাছটার তলায় নন্দি দাড়িয়ে । বিষ্ণুর মনে হল ও যেন তার জন্যেই অপেক্ষ করছে। বিষ্ণু কাছে আসতেই নন্দি এদিক ওদিক তাকিয়ে নীচু স্বরে বললে—বিষ্ণুদা, একটা কথা আছে । —কি ? —পিসিমার কাছে ও কথা বলেছ কেন ? বাবাকে জান না ? বিষ্ণু চুপ করে রইল। —মাঝে পড়ে কি হবে জান, আমি বকুনি খেয়ে মরব। বিষ্ণু এ কথায় মনে আঘাত পেলে । এইটুকু আত্মত্যাগ সে নন্দির কাছে প্রত্যাশা করতে পারে না ? নন্দির একথা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতও বটে। সে শুধু বললে—ও । নন্দি বাবের সঙ্গে বলে—‘ও’ ! না? শুধু ও বললে কি হবে ? এ নিয়ে বাড়ীতে অনেক কাও হয়ে গিয়েছে তুমি জান না । আমাকে তো বকুনি খেতেই হচ্ছে তোমার সঙ্গে মিশি বলে—তা ছাড়া তোমার নিন্দেও আর যে আমি সহ করতে পারছি নে বিষ্ণু দা ? বিষ্ণু বিস্ময়ের সঙ্গে ওর মুখের দিকে চাইলে । নন্দির চোখে জল চক চক করছে, চোখের জলে গলার স্বর আটকেছে। সে উত্তর দেবার আগেই নন্দি বললে –যাও, তুমি পালাও—এখুনি এ পথে কে এসে পড়বে। বাবা বাড়ী নেই, মা-রা সব নদীর ঘাটে—তাই তোমাকে কথাটা বলতে এলাম ।