পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8@ বিভূতি-রচনাবলী স্বকুমারী, স্বলোচনা, নলিনী এই সব। তা না--তুলসী –ছোঃ– বিষ্ণুর কথার ভঙ্গীতে মেয়েটি হেসে ফেললে । চোখ নীচু করে শাস্ত স্বরে বললে—ঠাকুরম রেখেছিলেন। আমি যখন হই, ঠাকুরমা বেঁচে ছিলেন কিনা ৷ —তোমাদের দেশ কোথায় ? —নদে জেলা, মদনপুরের কাছে । দেশে বড় তো যাওয়া হয় না। বাবার যেখানে চাকরি সেখানেই থাকতে হয় । —তুমি বড় ? আর কটি ভাইবোন ? —আমার ছোট আর দুই বোন, ছোট আর একটি ভাই এই দু বছরের। -- বেশ । খানিকক্ষণ কথাবার্তার পর মেয়েটি বললে—এইবার থাবেন ? বিষ্ণু বললে—মন্দ নয়। জায়গা এই বাইরের ঘরেই কর । —কেন, ভেতরের রোয়াকে করি । রোয়াকের ওপর চালা আছে । —না না–তুমি বাইরের ঘরে এখানেই জায়গা কর খুকি। বাডীর মধ্যে দরকার নেই। মেয়েটি বাড়ীর মধ্যে চলে গেল, কিন্তু অনেকক্ষণ পরে এসে বললে— মা বললেন—এখানে খাওয়ার অস্থবিধা হবে । রান্নাঘরের রোয়াকে জায়গা করে দিতে বললেন । g বিষ্ণু ব্যস্ত হয়ে বললে—না না–তুমি খুকি বাইরেই জায়গা করে দাও। কোন অস্থবিধে হবে না। বাডীর মধ্যে আমার বাধ-বাধ ঠেকবে । এখানেই দাও । খুকি বাড়ীর মধ্যে চলে গেল আবার । & বিষ্ণুর সমস্ত দেহমন চঞ্চল, উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। এই মেয়েটির মধ্যে পনের বছরের কিশোরী নন্দিকে কতকাল পরে আবার প্রত্যক্ষ করলে সে। সেই চোখ-মুখের ভঙ্গি, সেই হাসি ! স্বপ্নের মতু মনে হয় সব। ro বাইরের ঘরেই খাবার জায়গা করে দেওয়া হল । তুলসী পরিবেশন করলে । দোরের বাইরে ফিস ফিস শব্দ শুনে বিষ্ণুর মনে হল, এর মা রান্নাঘর থেকে খাবার বয়ে নিয়ে এসে ওকে সাহায্য করছে। বিষ্ণু আঁগে থেকেই সতর্ক হয়ে দোরের দিকে পিছন ফিরে বসেছে। নন্দি যেন কিছুতেই জানতে না পারে আজ সে তারই বাড়ীর অতিথি । খাওয়া শেষ হয়ে গেল। রাত বেশি হয়নি। পাড়াগায়ে শীতের রাত্রে সকাল সকাল লোকে আহারাদি চুকিয়ে ফেলে। বিষ্ণু একটা ব্যাপার বেশ বুঝতে পারলে আজ সে এখানে থাকলে নন্দিকে না ডেকে, তার সঙ্গে দেখা না করে থাকতে পারবে না। বার বার তাকে এ ইচ্ছা দমন করতে হয় প্রাণপণে । বার বার আবার অন্য পথ দিয়ে সেটা এসে মনকে চঞ্চল করে তোলে। ধমনীতে উন্মাদ রক্তস্রোত বইতে শুরু করেছে। মন বলছে—নদিকে ডাক, জীবনে এমন অবসর আর পাবে না। কতদিন পরে ! দেখা করবে না ?