পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও 8ፃ ঘুম অসম্ভব। না, সে একটিবার নদিকে খবর পাঠাবে। দেখা করতে দোষ কিছুই নেই, তুলসীকে ডেকে খবর পাঠাবে ? কি ভাবে বলবে ? তুলসী, তোমার মামার বাড়ী কোন গ্রামে । ধুতরোবেড়ে ? তোমার মা তাহলে আমাদের গ্রামেরই মেয়ে। বল গে, ধুতরোবেড়ের শিবনাথ ঘোষালের ছেলে বিষ্ণু ডাকছে, দেখা করবে। না, ওভাবে নয়। তুলসীকে ডেকে, কথায় কথায় তাকে শুনিয়ে দেবে যে তার বাড়ী ধুতরোবেড়ে। এতে তুলসী নিশ্চয় বলবে যে তার মামারবাড়ীও সেই গ্রামে। ডাক্তারের সঙ্গে এ সম্বন্ধে যে কথা একবার হয়েছিল, তুলসী তার খবর রাখে না। তুলসী তখন তার মায়ের কাছে ঠিক গিয়ে বলবে, বাইরের ঘরে যিনি এসেছেন, তিনি ধুতরোবেড়ের লোক। নন্দি নিশ্চয়ই বলবে, নাম কি জিজ্ঞেস করে আয় । বাপের বাড়ীর গ্রামের লোক সম্বন্ধে নন্দি উদাসীন থাকতে পারবে না । সে বলবে—বল গিয়ে ধুতরোবেড়ের শিবনাথ ঘোষালের—ইত্যাদি । নন্দি ছুটতে ছুটতে আসবে বাইরের ঘরে । , বিষ্ণু বিছানা থেকে উঠে বসল। উত্তেজিত ভাবে কিছুক্ষণ পায়চারি করলে বাইরের দিকের রোয়াকে । তারপর ডাক দিলে—তুলসী, তুলসী ! তুলসী ছুটে এল বাইরের ঘরে । বিষ্ণু বললে—ডাক্তারবাবু কখন ফিরবেন খুকি ? গলার স্বর অনেকটা নীচু করেই সে কথা বলছে অনেকক্ষণ থেকে। তুলসী বললে—ত তো জানি নে । মাকে জিজ্ঞেস করে আসব ? —না, থাক। হ্যা শোন, আমি এখুনি চলে যাব। বিশেষ জরুরী কাজ মনে পড়ল। ট্রেন ধরতে হবে গিয়ে । তোমরা বাইরের দোর রন্ধ করে দাও । তুলসী অবাক হয়ে বললে, এত রাত্রিতে এই শীতে এখন যাবেন কেন ? কাল সকালে উঠে – বিষ্ণু ব্যস্তভাবে বললে—না—না, আমার খুব জরুরী দরকার। এই রাত বারোটার ডাউন খুলনা মেলেই যেতে হবে। তুমি বাড়ীর মধ্যে গিয়ে বলগে— তুলসী তখুনি বাড়ীর মধ্যে গিয়েই আবার ফিরে এসে বললে—ম বারণ করেছেন। এসব দেশ ভাল না। এত রাত্রিতে যাবেন না। বাৰা রাত তিনটের মধ্যে আসবেন । আপনি না হয় সেই গরুরগাড়ীতে যাবেন—হেঁটে এক যাবেন না ইন্টিশানে। 曼 নন্দি বারণ করে পাঠিয়েছে। কাকে বারণ করেছে না জেনেই বারণ করে পাঠিয়েছে। বিষ্ণু হঠাৎ যেন রূঢ় হয়ে উঠল। ঈষৎ রুক্ষ কর্কশ স্বরে বললে—নী—ন, আমার কাজের ক্ষতি হবে। থাকবার জো নেই। বাইরের দরজা বন্ধ করে দাও। বিষ্ণু সরলা গ্রাম্য বালিকাকে অবাক করে দিয়ে এক রকম ছুটেই বাড়ীর বার হয়ে গেল। তার পর—নিঃসঙ্গ তারা-ভরা রাত্রি। মাঠের পর মাঠ। পৌষের কনকনে শীত। প্রস্ফুট সর্ধেকূলের স্বগন্ধ। বহুদিনের স্বল্পভরা প্রথম যৌবনের নেশা ওর শিরায় শিরায়।