পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভুবন বোষ্ট্রমী ওই পথে ভুবন বোষ্ট্রমী যেত। অনেকদিন গ্রামের এ পথে ইটিনি। এই ঝেেেপ ঝোপে ঘেটুফুলে ভর্তি ফাঙ্কন-অপরাহ্লে গ্রামের পিছনকার মাঠ ও বনের মধ্যেকার স্থাঁড়িপথের ধারে দাড়িয়েছি এসে হঠাৎ আজ বেড়াতে বেড়াতে। পচিশ বছর এ পথে পা দিইনি—সেই বাল্যকালে আসতাম খেলাধুলে করতে আপনমনে বনের ধারে। ওই পথটা নদীর ঘাটে যাবার। আমার ছেলেবেলায় ৰোষ্টমপাড়া ও জেলেপাড়ার লোকে ওই পথ ধরে নদীর ঘাটে যেত—এখনও বোধ হয় যায় । আমি গ্রামে বহুকাল পরে ফিরেছি এ বছর ফাঙ্কন মাসে । মাঠের মধ্যে বেড়াতে বেড়াতে এই অপরাহ্লে এসে পড়েছি এই জায়গাটাতে । প্রথমটাতে চিনতে পারিনি, তার পরেই মনে হল, ও, ঐ সেই ছিরেপুকুরের ধারের পথ ! ওদিকে বেলেডাঙার বাওড়ের ধারের বট-অশথের ছায়াস্কিন্ধ তীর । আম্রমুকুলের ঘন স্ববাস সন্ধ্যার বাতাসে। পৃথিবীর বসন্ত আজ কি অপূর্ব রূপেই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে আমার চোখের সামনে । একটা বেলগাছ (যুগলকাকাদের বেলগাছ, এটা তাদেরই জমিতে অবস্থিত, ছেলেবেলা থেকেই জানি ), পাকা পাকা বেল ঝুলছে। কত বেল কুড়িয়ে নিয়ে যেতাম এখান থেকে ছেলেবেলায় । বেশ ভাল বেল । দাড়িয়ে দাড়িয়ে হঠাৎ ভুবন বোষ্ট্রমীর কথা মনে পড়ল কেন ? সে এ পথে যেত, এই বিকেলবেলা ওই বন-ঝোপ-ঘেরা সরু ছায়াক্ষিপ্ত পথটি বেয়ে রাংচিতে বন ও গাবভেরেগু গাছের পাশ কাটিয়ে। ঝরা শুকনো বঁাশপাতার রাশ পা দিয়ে মচমচ করে মাড়াতে মাড়াতে, ওই মাদার গাছের তলায় পড়া হলদে হলদে মাদার ফুলের কুঁড়ির স্ববাস আজ্ঞাণ করতে করতে, এ পথ দিয়ে নদীর ঘাটে গা ধুতে যেত ত্রিশ-বত্রিশ বছর আগে । • • • ভুবন বোষ্ট্রমীকে ত্রিশ-বত্রিশ বছর আগেই দেখতাম। ফর্স খাটােমত মাচুষটি। বেশ শাস্ত মুখশ্ৰী, কানে ছিল সেকেলে মাকড়ি—হাতে কঁাচের চুড়ি । বয়স আমার মায়ের সমান হবে, দু-এক বছরের কমবেশি না হতে পারে এমন নয়। আমি তখন আট বছরের ছেলে, ন বছরের ছেলে, দশ বছরের ছেলে। জীবনের ঐ তিনটি বছর পরে আর কখনও তাকে দেখিনি। ভুবন বোষ্ট্রমী আমাকে বলত, হ্যাগ বামুনদের খোক, তুমি একা বনে বনে কি কর ? আমি সলজ্জ স্বরে বলতাম—এই— go —বাবাঠাকুর যেন আমার কি ! যাও যাও, বাড়ী যাও । এখানে বড় শেয়াল বেরোয় । ছেলেমান্থব, এখানে থাকে না । যাও— —যাচ্ছি । , t —আমি এগিয়ে দিয়ে আসব তোমায় খোকা ?