পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8 বিভূতি-রচনাবলী আমরা যেমন নিঃশব্দে সেখানে গিয়েছিলাম তেমনই নিঃশবে চলে এলাম মনে বিস্ময় ও আনন্দ নিয়ে । to এর পরে উমাচরণ মাস্টার যখন পড়াতেন, তখন স্থা করে তার দিকে চেয়ে দেখতাম। একজন কবি বটে । উনি ঠিকই বলেছেন—বড় বড লোকের প্রথম জীবনে মাস্টারি করে । ওঁর বয়স বেশি হয়েছে বটে কিন্তু উনি একজন কবিও তো হয়েছেন। সারাটা কিছুই বোঝে না | বছরখানেক কাটল । আমরা কটি ছেলে উচ্চ প্রাইমারি পরীক্ষা দেবার জন্যে তৈরি হয়েছি। সেই বছর উমাচরণ মাস্টার আমাদের নিয়ে রানাঘাটে যাবেন পরীক্ষা দেওয়াতে । চারটি ছেলে—মনে আছে চক্ষত্তিদের কানাই, আমি, সতু ও সারদা । দুর্গাপুর থেকে হেঁটে বেরিয়ে শাবলতলার মাঠে যখন পড়েছি, তখন দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে । , বডড মনে আছে সেই অপরাহের কথাটি । তখন শাবলতলার মাঠে বা বা করছে রোদার। মস্ত বড় মাঠের এখানে ওখানে কুলগাছ সেওড়া-ড'টা আর বনতুলসীর জঙ্গল। ধুধু করছে মাঠ যেন সমূত্রের মত, কুলকিনারা নেই কোনও দিকে। এত বড় মাঠ কখনও দেখি নি। দুর্গাপুর থেকে শাবলতলার মাঠ প্রায় দু ক্রোশ আড়াই ক্রোশ পথ। কাছাকাছি কোন গ্রাম নেই এ মাঠের কোনও দিকে। একটা সরু মেঠো পথ মাঠের মধ্যে দিয়ে দূরে কোথায় চলে গিয়েছে। কি একটা ফুলের গন্ধ বেরুচ্ছে দুপুরের রোদে । আমরা সবাই ছেলেমানুষ, ক্লান্ত হয়ে পড়েছি । উমাচরণ মাস্টার বললেন—যাও সব গাছতলায় একটু বসে নাও । 尊 আমাদের প্রত্যেকের কাধে একটা করে বোচক । তার মধ্যে আমাদের বই-দপ্তর আছে, কাপড় গামছা ও র্কাথা আছে । থাকতে হবে নাকি হোটেলে । আমরা বোচক নামিয়ে.একটা কুলগাছের তলায় সবাই বসলাম। মাস্টার মশায় বললেন—দেখ তো কুল হয়েছে কিনা। সতু দেখে বললে-কুল হয়েছে, ছোট ছোট-খাওয়া যায় না। কানাইএর মা ওকে সেখানে গিয়ে খাবার জন্তে নারকোলের নাড়ু আর রুটি করে দিয়েছিলেনু পুটুলিতে। সতু ওর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে খেলে। আমি চাইতে গেলাম, কানাই বললে, নেই। আমরা একটু পরে সবাই বোচক রেখে হুটোপাটি করে মাঠের মধ্যে বনতুলসীর জঙ্গলে খেলা করতে লাগলাম। কি সুন্দর যে লাগছিল । ক্ষুদ্র গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় খেলা করে বেড়াই, এত বড় মাঠের এত ফাকা জায়গায় খেলা করবার স্থযোগ কখনও পাইনি। ওদের কেমন লাগছিল, জানি না, আমার মনে হচ্ছিল যেন কোন নতুন রাজ্যে রূপকথার জগতে এলে পড়েছি--তুলসীমঞ্জরীর স্বগন্ধভর অপরাত্ত্বের বাতাসে যেন কোন স্বয়ূরের ইঙ্গিত। যে দেশ কখনও দেখিনি, যার কথা কিন্তু আমার মনে সর্বদাই উকি দেয়, আজ এই শাবলতলার মাঠে