পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও 《食 এসে সেই দূর-দূরান্তরকে দেখতে পেলাম। ঝোপে কোপে শালিক আর ছাতারে পাখীর কলরব, এখানে ওখানে বেলে জমিতে খেকশিয়ালের গর্ত, রাঙা কেলেকোড়া ফুলের লতা জড়িয়ে উঠেছে বুনো কলুচটকা আর তিক্তিরাজ গাছে, জনমাম্বর্ষের বাস নেই, একটা কলা গাছ কি আম গাছ চোখে পড়ে না, যেন এ জগতে মানুষের বাস নেই, শুধুই বনঝোপের শুকনে পাতার ওপর দিয়ে মচ মচ করে পাতার ধুলো উড়িয়ে এ দেশে চলে যাও, লেখাপড়ার বিরক্তিকর বাধ্যতা এখানে নেই । খেলা ছেড়ে লেখাপড়া করতে কেউ বলৰে না এ দেশে । উমাচরণ মাস্টার সেই পুরনো, একঘেয়ে, বালকের পক্ষে মহা বিরক্তিকর জগতের মাছুষ, এ নতুন জীবনের উদাস মুক্তির মধ্যে, দিনরাতব্যাপী খেলা আর অবকাশের মধ্যে ওঁর স্থান নেই আদৌ । বেলা পড়ে এসেছে। হঠাৎ সতু বললে—হঁ্যারে, মাস্টার মশাই কোথায় রে ? আমি বললাম—কেন, কুলতলায় নেই ? —কতক্ষণ তো তাকে দেখছি নে। গেলেন কোথায় ? আমাদের যেতে হবে না ইন্টিশনে ? ছু ঘণ্টার ওপর তো এখানে আছি । গাড়ী ধরতে হবে না ? আমার মনে হচ্ছিল গাডী ধরে আর কি রাজা হব আমরা ! এই তো বেশ আছি, উচ্চ প্রাইমারি পরীক্ষার বিভীষিকার মধ্যে না-ই বা গেলাম। ইনস্পেক্টর এসে সেবার স্কুলে বলে গিয়েছিল রানাঘাট গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার নাকি নানা গোলমাল । খাতায় লিখে পরীক্ষা হয়, গার্ড আছে সেখানে ঘাডের ওপর ঝুকে, একটু যে দেখাদেখি করবে কি বলাবলি করবে তার কোন উপায় নেই। বলাবলি করলেই মহকুমার হাকিমের সামনে নিয়ে গিয়ে হাজির করবে, তিনি জেলও দিতে পারেন, জরিমানাও করতে পারেন। একটু ফিসফাস করবার জো নেই সেখানে। নবমীর পাঠার মত কাপতে কাঁপতে ঢুকতে হবে হলঘরে। কি ভীষণ পরিণাম ছাত্রজীবনের । সত্যি বলছি, শাবলতলার মাঠ দেখবার পরে, এখানে এসে এই ছ ঘণ্টা ছুটোছুটি করে বেড়ানোর পরে আমি যেন জীবনের সার্থকতা খুজে পেয়েছি । তা হচ্ছে এই রকম বিশাল মুক্ত বনময় ধুলিভরা মাঠের অবাধ শান্তি আর স্বাধীনতার মধ্যে খেলা করে বেড়ানো। পরীক্ষা দিয়ে কি হবে ! কানাই এসেও বললে—আমরা যাব কখন ? মাস্টার মশাই কোথায় ? সত্যিই তো, তাকে কোনও দিকে দেখা যাচ্ছে না। সবাই মিলে খুজতে বার হওয়া গেল । সতু ডাকতে লাগল—ও মাস্টার মশাই, মাস্টার মশা-ই-- কোনও সাড়া নেই। . সতু ভীতমুখে বললে—বাঘে নিয়ে গেল নাকি রে r কানাই বললে—দূর, এখানে মানুষ-খেকো বাঘ থাকবে ? —ন, নেই! তোকে বলেছে ! —তবে গেলেন কোথায় ? o আমি বললাম—তোমরা খুজে দেখ। আমি এখানে খেলা করি