পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখও ¢ፃ জানিস ? চমৎকার সিনারি ওখানটাতে। কবিতা লিখছিলাম। কি চমৎকার মাঠটা বুঝিস কিছু ? p আমারও চোখে যে এই অপরাহ্লে এই মাঠ অদ্ভুত ভাল লেগেছে, মাস্টার মশায়ের কথার মধ্যে তার সায় পেয়ে আমার মন খুশিতে ভরে উঠল। আমি নতুন দৃষ্টি পেলাম সেই দিনটিতে, উচ্চ প্রাইমারি পরীক্ষা দিতে যাবার পথে। উমাচরণ মাস্টার কত বড় শিক্ষকের কাজ করলেন সেদিন—তিনি নিজেও কি তা বুঝলেন ? আমার কথা এখানেই শেষ। উমাচরণ মাস্টারের ইতিহাসও এখানেই শেষ। প্রায় ত্রিশবত্রিশ বছর আগের কথা সেসব । উমাচরণ মাস্টার আজ আর বোধ হয় বেঁচে নেই। বড় হয়ে উমাচরণ চক্রবর্তী বলে কোনও কবির লেখা কোথাও পড়িনি বা কারও মুখে নামও শুনি নি । তাতে কিছু আসে যায় না। যশোভাগ্য সকলের কি থাকে। আজ এতকাল পরে শাবলতলার মাঠে এসে আবার মনে পড়ে গেল বালোর সেই অপূর্ব অপরাত্ত্বের কথা, মনে পড়ে গেল উমাচরণ মাস্টারকে । দুঃখ হল দেখে—সে শাবলতলার মাঠ একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে । মুছে গিয়েছে সে সৌন্দর্য, সে নির্জনতা । উমাচরণ মাস্টারের জন্তে মনটা এতদিন পরে যেন কেমন করে উঠল । পৈতৃক ভিট৷ মধুমতী নদীর ওপরেই সেকালের প্রকাও কোঠবাড়ীটা। রাধামোহন নদীর দিকের বারান্দাতে বসে একটা বই হাতে নিয়ে পড়বার চেষ্টা করল বটে, কিন্তু বইএ মন বসাতে পারলে না । কেমন সুন্দর ছোট্ট গ্রাম্য নদীটি, ওপারে বঁাশবন, আমবন—বহুকালের । ফলের বাগান যেন প্রাচীন অরণ্যে পরিণত হয়েছে। একা এতবড় বাড়ীতে থাকতে বেশ লাগে । খুব নির্জন, পড়াশুনো করবার পক্ষে কিংবা লেখাটেখার পক্ষে বেশ জায়গাটি। তাদের পৈতৃক বসতবাটী বটে, তবে কতকাল ধরে তাদের কেউ এখানে আসেনি, কেউ বাস করেনি। 穆 রাধামোহনের বাবা /প্তামাকান্ত চক্রবর্তী তার বাল্যবয়সে এ গ্রাম ছেড়ে চলে যান। মেদিনীপুরে তার মামার বাড়ী। সেখান থেকে লেখাপড়া শিখে মেদিনীপুরে ওকালতি করে বিস্তর অর্থ উপার্জন করেন এবং সেখানে বড় বাড়ীঘর তৈরি করেন। স্বগ্রামে যে একেবারেই আসেননি তা নয়, তবে সে দু-একবারের জন্তে। এসে বেশি দিন থাকেনওনি। অতবড় পসারওয়ালা উকিল, থাকলে তার চলত না। গ্রামের বাড়ীতে জ্ঞাতি-ভাইরা এতদিন ছিল, তারা সম্প্রতি এখান থেকে উঠে গিয়ে অন্যত্র বাস করছে, কারণ গ্রামে বসে থাকলে আর সংসার চলবার কোন উপায় হয় না।