পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড $36. এক ঘণ্ট। পরে দেখা গেল বীণাপাণি রাস্নাঘরে বসিয়া ডাল বাটিয়া কি একটা পিঠা তৈয়ারির যোগাড় করিতেছে, বাহিরের কনকনে শীত হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্ত হরিচরণ উনানের পাশে বসিয়া তামাক টানিতেছে ও স্ত্রীর সহিত খোশগল্প করিয়া সমস্ত দিনের শ্রম নিবারণের চেষ্টা করিতেছে । নীপু ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। ৰীণাপাণি ভুলই শুনুক কি যাই হক, স্বামী বাহির হইয়া যাইবার সময় সে শুনিয়াছিল র্তাহার ফিরিতে রাত হইবে, কাজেই যে ডাল পূর্বে বাটা উচিত ছিল তাহা সে এখন বাটিতে বসিয়াছে । ইহার পর কখন কি হইবে ? বীণাপাণি অত্যন্ত অপ্রতিভ হইয়া তাড়াতাড়ি বাটিতে লাগিল । হরিচরণ ভাল করিয়া এক কলিকা তামাক সাজিতে সাজিতে বলিল—অত করে তাড়াতাড়ি করছিস কেন রে ? না হয় একটু রাতই হবে এখন। এই তো সবে সন্ধ্যে, শেষে আঞ্জলটাঙল ছেচে ফেলবি ? নিতান্ত ঘরোয়া লোক হরিচরণের স্ত্রীর সহিত সম্ভাষণের রীতি এই রকমই। অবশ্য ছেলেপিলের সম্মুখে এবং বাহিরের লোকের কাছে সম্ভাষণের অন্য রীতি আছে । এটা নির্জনের একটু গাঢ় রকমের আদরের ডাক । বীণাপাণি হাসিয়া ৰলিল—কেন ? আঙুল কি রোজই ছেচি নাকি ? বীণাপাণি দেখিতে মন্দ নহে—রংটি খুব ফরসা না হইলেও উজ্জল খামবর্ণ, মুখের গড়নটি বেশ স্বন্দর, চোখদুটিও ডাগর ডাগর। পাড়াগায়ের গৃহস্থ-বধু, কাজকর্মে থাকে বলিয়া শরীরেও বেশ নিটোল স্বাস্থ্য । হরিচরণ তামাক টানিতে টানিতে বলিল—না, সত্যি বোঁ, দেখ কতদিন ভাবছি, একজোড় ভালরকম অনন্ত তোকে গড়িয়ে দেব, তা এই হবে, এই হবে করে—বুঝলি না ? বীণাপাণি একটুখানি হাসিয়া মুখ নীচু করিল। সে বিবাহের পর প্রথম শ্বশুরবাড়ী আসিয়া আজ দশ বৎসর ধরিয়া এ কথা শুনিয়া আসিতেছে । একজোড়া সোনার অনস্ত গড়াইয়া দেওয়া ষে তাহর দরিদ্র স্বামীর পক্ষে কতটা অসম্ভব, তাহা সে বুঝিত। স্বামীকে একটু জুলাইবার জন্য সমদুঃখে বলিল—ত এবার তো হয়েও যেত ; ঐ সেটেলমেন্টের খরচ দিতেই তো অনেকটা বেরিয়ে গেল । হরিচরণের সামান্ত যাহা কিছু জমিজমা ছিল, এবার সেটেলমেণ্টের খরচ বাবদ তাহার দরুন গভর্নমেন্টের লোককে ত্রিশ টাকা দিতে হইয়াছিল। সে কিন্তু স্ত্রীর কাছে, ও যে-সব লোকে জমিজমার ধার ধারে না তাহাদের নিকট প্রচার করিয়া বেড়াইত যে, তাহার পৈতৃক অনেক জমি লোকে ফাকি দিয়া খাইত, এখন সেটেলমেণ্টে সেগুলি সে ফিরিয়া পাইয়াছে, প্রায় ‘শদাবধি' টাকা এজন্য তাহাকে খরচা দিতে হইয়াছে, সেটেলমেণ্টের ক্যাম্পে তাহার খুব খাতির হইয়াছে, ইত্যাদি। স্ত্রীর চোখে বড় হইতে সকলেই চাহে। স্ত্রীর মুখে সেটেলমেন্টের কথা শুনিয়া হরিচরণ আরম্ভ করিল—দেখ, সেনি তো ক্যাম্পে গেলাম। আমাদের গায়ের অনেক সৰ বড় বড় ( হরিচরণ আঙুল দিয়া দেখাইল )— হ স্থ f。奪。bー>bア