পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

もも* বিভূতি-রচনাবলী চেয়ে প্রবল হইয়া উঠিল। ডাগর চক্ষু-দুটি ছাপাইয়া চোখের জল ঝরঝর করিয়া গড়াইয়া পড়িল । . কৃষ্ণলালবাবু তাড়াতাড়ি কোচার খুঁট দিয়া তাহার চোখের জল মুছাইয়া দিতে দিতে সত্ত্বন দিতে লাগিলেন—ছিঃ বীণু, মা আমার—কেঁদো না । কাদে কি মা, ছিঃ ! বীণাপাণি আঁচলে চোখ মুছিতে মুছিতে কাদ-কঁদ স্বরে বলিল—এতদিন কোথায় ছিলেন জেঠামশায় ? —আমি তো লাহোরে ছিলাম অনেকদিন । তার পরে দেশে এসে সব শুনলাম । তোর বিয়ের সময়ও আমি চিঠি পেয়েছিলাম বটে, কিন্তু আসতে পারলাম না । বড় জরুরী কাজ পড়ে গেল । এই তো সেদিনকার কথা— —নরুদা ভাল আছে জেঠামশায় ? —নর ভাল আছে, পড়ছে। এবার বি-এ পরীক্ষা দেবে । —আমার কথা বলে নরুদা ? 象 — বলে না মা ! খুব বলে । তার নিজের বোন নেই, তোকেই বোনের মত ছেলেবেলা থেকে জানে। ছেলেবেলা খেলা হতে হতে তুই একবার ঝগড়া করে নরুর মুখ আঁচড়ে দিয়েছিলি, তোর মনে আছে বীণু ? বীণাপাণি একটুখানি হাসিল ; সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু শৈশবের সাথী নরুদার কথা মনে পড়ায় তার চোখের পাতা পুনর্বার অশ্রুসিক্ত হইয়া উঠিল । বলিল—নরুদা আমায় একবারটি দেখতে আসে না কেন জেঠামশায় ? আপনি গিয়ে একবার পাঠিয়ে দেবেন ? কৃষ্ণলালবাবু বলিলেন-দেব বই কি মা, দেব। তবে এখন তো আসতে পারবে না, এবার যে তার পরীক্ষা কিনা । বি-এ পরীক্ষী হয়ে গেলে তখন তোকে একবার দেখে যাবে, বলে দেব । বীণাপাণির মনে পড়িল, রাত হইয়াছে, জেঠামশায়ের আহারাদির বন্দোবস্ত তো করিতে হইবে । সে বলিল—আপনি বস্থন জেঠামশায়— 馨 কৃষ্ণলালবাবু শশব্যস্তে প্রায় চৌকি হইতে উঠিয়া পড়িয়া বলিলেন—শোন মা, শোন। আমার জন্যে এত রাত্রে কিছু রাধতে-টাধতে হবে না। আমি রাত্রে বরং— বীণাপাণি ঘাড় বাকাইয়া জননীর মত শাসনের স্বরে বলিল—আচ্ছ সে হবে, বন্ধন জেঠামশায় । আমি সে বুঝব। কৃষ্ণলালবাবু হতাশ হইয়া বসিয়া পড়িলেন । বীণাপাণির বড় ইচ্ছা হইল জেঠামশায়কে শীতের রাত্রে গরম গরম লুচি ভাজিয়া খাওয়ায় । কিন্তু পয়সা কই ? তাহাতে এখনই তো প্রায় এক টাকা খরচ। সংসারে অসচ্ছলতা যে কতদূর তাহা তো লে জানে। সে রান্নাঘরে গিয়া দেখিল স্বামী উচুনের পাড়ে বসিয়া আপনমনে তামাক টানিতেছে। স্ত্রীকে দেখিয়াই হরিচরণ ৰলিল-তা, কি, ভাত-টাত তো আবার রাখতে হবে ? বীণাপানি বলিল—একটা কথা বলি, রাখবে জেঠামশায়ের বয়স হয়েছে। আমার