পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড هوا কাছে এসেছেন, এ সময় যদি একটু সেবা-যত্ন করতে না পারব তবে মেয়েজন্ম মিথ্যে নিয়েছিলাম। আমি ভাবছি জেঠামশরকে খানকতক লুচি ভেৰুে দিই। তুমি তোমার সেটেলমেণ্টের টাকা থেকে একটা টাকা নিয়ে গিয়ে বিপিনের দোকান থেকে জিনিস কিনে নিয়ে এস না ?—আনবে ? হরিচরণ কিছু পূর্বে স্ত্রীর নিকট যে জমিদারগিরির আস্ফালন করিয়াছিল, আসন্ন বিপদের মুখে সে কথা ভুলিয়া গেল। মাথা চুলকাইতে চুলকাটতে বলিল—তা তো আনলে ভালই হত— মানে আন তো কিছু উচিত ছিল, কিন্তু হয়েছে কি, এই চব্বিশের মধ্যে টাকা দাখিল না করলে আবার সার্টিফিকেট জারী হবে। ঐ যা যোগাড় করা আছে—তা থেকে— বীণাপাণি উপায় ঠাওরাইয়া রাখিয়াছিল, বলিল—তুমি তার জন্যে ভেবে না, আমার কানের ছেদা ভাল হয়নি, মাকড়ি পরতে বড় ব্যথা হয়—আজই খুলে রাখতাম, তা নীপুর জন্মবার বলে খুলিনি। তুমি ঐ থেকে টাকা নিয়ে যাও, কাল সকালে বরং মাকড়ি বাধা দিয়ে দুটে টাকা আর কোথাও পাবে না ? মাকড়ি তো সেই খুলতেই হবে ? ইহার পর আর কোন প্রতিবাদ করা ভাল দেখায় না বলিয়া হরিচরণ বলিল—তবে একটা বাটি দাও, ঘিটা আনতে হবে । যাই দেখি— হরিচরণ চলিয়া গেলে বীণাপাণি দালানে গিয়া দেখিল কৃষ্ণলালবাবু চামড়ার বাগ খুলিয়া কি সব জিনিসপত্র বাহির করিতেছেন। তাহাকে দেখিয়া বলিলেন—ম বীণু, শোন, এদিকে আয় । আমার একটা সাধ তোকে পুরোতে হবে মা । বীণাপাণি হাসিয়া বলিল—কি জেঠামশায় ? —তুই ছেলেবেলা আমার কাছে বসে আমার জলখাবার থেকে খাবার তুলে খেতিস তোর মনে আছে ? আমি কলকাতা থেকে খাবার এনেছি ব্যাগে করে, তোকে ছেলেবেলার মত খাওয়াব বলে । আয় এখানে বোস বীণু—তোকে কতদিন খাওয়াইনি ! তখন এই সব খাবার খেতে তুই খুব ভালবাসতিস তোর মনে আছে ? আয় মা, এখানে বোস দিকি। " o জেঠামশায়ের কথা শুনিয়া বীণাপাণির খুব আমোদ অনুভব হইল। সঙ্গে সঙ্গে মনে হইল, বাপ-জেঠা ভিন্ন কি কেউ মেয়ের কষ্ট বোঝে ? সে খাইতে ভালবাসে সত্য, কিন্তু সেজন্য এখানে তো কেউ কোনদিন তাহাকে আদর করিয়া ভাল কিছু খাইতে দেয় নাই, পূর্বে তো তাহার শ্বশুরশাশুড়ী বর্তমান ছিলেন । আর জেঠামশায় আজ কলিকাতা হইতে ব্যাগে বহিয়া খাবার আনিয়াছেন তাহাকে খাওয়াইবার জন্য ! শুধু যত্ন ও স্নেহ দান করিতে করিতে তার মনটি যে গৃহিণী ও জননীর প্রবীণত্বে উপনীত হইতেছিল, আজ এই প্রৌঢ়ের সংস্পর্শে তাহার সে মনটি আবার দশ বৎসরের ছোট মেয়ের মত হইয়া গেল। তাহার পর তাহার ঘুমন্ত খোকা নীপুর কথা মনে পড়িল—সেও খাবার খাইতে ভালবাসে। এ পর্যন্ত জেঠামশায় নীপুর কথা কিছু বলেন নাই, বোধ হয় তাহার কথা তিনি জানেন না—জানিলে নিশ্চয় তাহার কথা জিজ্ঞাসা করিতেন। নিজে বলিতে তাহার লজ্জা করিতে লাগিল ।