পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপলখণ্ড Գ(t তুচ্ছ—তাহার জন্য এ ভয় নয়। স্বামী মিথ্য। কথা বলিতেছে কেন ? তবে কি—? কথাটা সে ভাবিতেও পারিল না, কিন্তু মনের মধ্যে সেকথা স্পষ্ট ভাবে গ্রহণ করিতে না পারিলেও একটা মহাযন্ত্রণাকর অনুভূতি মনের কোন গোপন তল সুইতে যেন ঘনাইয়া উঠিতে লাগিল । তাহার কোন নির্দিষ্ট রূপ নাই—তাহ আবছায়ার মতই অস্পষ্ট, অথচ তীক্ষু ও কঠিন--রাত্রিশেষের হিমকণার মত ঠাণ্ড তাহার গোপন সঞ্চার । সেই তীক্ষু শৈত্য ক্রমে ক্রমে তাহার হৃৎপিণ্ডে পৌছাইয়া সেখানকার উষ্ণ রক্তস্রোতকে যেন জমাট বাধাইয়া দিল । তাহার চোখের সামনে হরিচরণ হাকড়াক করিয়া ঘর তোলপাড় করিতে লাগিল।” বাক্সের নীচে, সিন্দুকের নীচে, চৌকির নীচে, এবং তাহা ছাড়া যত অসম্ভব স্থানে খুজিতে লাগিল-বীণাপাণি চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। স্বামীকে কি বলিবে ? একবার ভাবিল, বলে যে, সে তাহাকে সন্ধ্যার সময় ঘাটে যাইবার পথে দেখিয়াছে—কিন্তু— নts, ছিঃ••• সেদিন তো বটেই, পরের দিনও কাটিয়া গেল । ব্রেসলেটের কোন সন্ধান হইল না । হরিচরণ বলিতেছে যে, সে থানায় গিয় ডায়েরি করিয়া আসিয়াছে, এখানে বাস করা অসম্ভব হইয়া উঠিল—আর চলে না, ইত্যাদি । শীতের সেই ঠাণ্ড রাত্রি ধীরে ধীরে শেষ হইয়া আসিল-ভাঙা জানালার ফাক দিয়া চাদের আলো বিছানায় আসিয়া পড়িল । বিবাহের পর হইতে আজ পর্যন্ত যে মধুর অনুভূতি তাহার মনের মধ্যে চিরজাগরিত ছিল, দুঃখে কষ্টে যাহা তাহার নীরব অবলম্বন, জানালার বাহিরের ঐ ভোরের জ্যোৎস্নার মত তাত ধীরে ধীরে মন হইতে মিলাইয়া যাইতেছে। সংসারের শত অনটনেও মুখে যে হাপি তাহার চরদিন ফুটিয়া থাকিত, এ কোন নিষ্ঠুর অপহারক তাহার সরল নারী-হৃদয়ের সে গোপন ঐশ্বর্য এক মুহূর্ত লুটিয়া লইল । আজ দশ বৎসর ধরিয়া তিলতিল সঞ্চয়ের সে যে অমূল্য রত্নভাণ্ডার ! গাছে গাছে পাখীরা যখন জাগিয়া উঠিয় কলরব করিতে লাগিল, বীণাপাণি বিছানা হইতে উঠিয়া তখন বাহিরে গেল। সমস্ত রাত না ঘুমাইয়া তাহার চোখ রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। বঁাশগাছের মাথা অন্যদিনের মত আঞ্জও ভোরের হিদুলরাগে রাঙা, পুকুরের পথে কচি কচি দূর্বালে শিশিরের জলের আলো আজও রামধন্থর রঙ ফলাইয়াছে—আস-শেওড়ার ঝোপের মাথায় রাঙালতায় সাদা ফুলগুলি অন্যদিনের মতই নব-প্রস্ফুট ; কিন্তু পৃথিবীর চেহার এক রাতেই তাহার কাছে বদলাইয়া গেল কিসে ? সমস্ত দিন কোনও রূপে কাটিল। বীণাপাণির মুথে ব্রেসলেটের সম্বন্ধে এ পর্যন্ত কোন কথাই আর শোনা যায় নাই। চুপ করিয়া কলের পুতুলের মত সে সংসারের কাজ একে একে করিয়া গেল। রাত্রে শুইয়া তাহার আর ঘুম হইল না। তাহার সকল নির্ভরতা-ভরা নারীহয় যেন নিষ্ঠুর আঘাতে একেবারে ভাঙিয়া গিয়াছে। সেদিন ভোরে যখন হরিচরণ: উঠিল তখনও বীণাপাণি শুইয়া । হরিচরণ কাজে বাহির হইয়া গেল ; ফিরিল যখন, দেখিল