পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b е বিভূতি-রচনাবলী —বাড়ী কোথায় তোমার ? —শাইলেপাড়া। , —নাম ? —ইচু মণ্ডল । বেলা আড়াইটের গাড়ী দূরের রেল লাইন দিয়ে গড় গড় করে চলে গেল। জনমজুরদের জন্যে জমির মালিক খাবার পাঠিয়েছে, একজন লোকে ধাকে ঝুলিয়ে আধক্রোশ দূরবর্তী সনেকপুর গ্রাম থেকে র্কাসার জামবাটিতে সাজিয়ে এনেছে গরম ভাত, কুমড়োর ঘণ্ট ও কুচো চিংড়ি ভাজা । এ সময় ভাল খেতে দিয়ে মন খুশি করা মানে বেশি কাজ আদায় করা ওদের কাছ থেকে। জমির মালিকের তা জানে। আখের মণ্ডল খেতে খেতে বলে—আজ এটুটু সকাল সকাল যাব । মোর ঘরে জুন নেই—বাজার থেকে কুন না নিয়ে গেলি বাচ-কাচ খেতি পাবে না । —মুন কনে পাবা ? বাজারে কালও খোজ করিছি, মুন মেলে না ।" —ওমা, আলুনি খেয়ে খেয়ে মুখি তো পোকা পড়ে গেল । —আর অন্ধকারে খেয়ে খেয়ে চকি চ্যাল বেরুল । কেরাচিমি তেলের মুখ দেখিনি कठकॉल । –কুমড়োর ঝালডা করেছে বেশ। সনেকপুরের এরা খেতি দেয় ভাল, পেটটা ভরি খেতি দেয় । কেরাচিন্নি পাবা কোথায় ? খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আখের মণ্ডল দা-কাটা তামাক সাজলে কলকেতে । বেশ করে আগুন ধরিয়ে প্রবীণ রমজান মণ্ডলের হাতে দিয়ে বললে—হাদে ধর চাচা । ইচু বললে—চাচা, তোমার বয়স হল ক কুড়ি } —তা ষেবার জোড়া বন্তে হয়েল সেবার আমি গরু চরাতে পারি, তিরিশ কি চল্লিশ হল পেরায়— কেউ বিশেষ বুঝতে পারলে না। জোড়া বন্যা কত বৎসর পূর্বে কোন সালে হয়েছিল কেউ জানে না। রমজানের বয়স কম হলেও সত্তর ছড়িয়েছে । যখন সে গরু চরায় তখন এরা কেউ জন্মায় নি। সংখ্যা সম্বন্ধে জ্ঞান এদের নিতান্তই সীমাবদ্ধ । বেলা যায়-যায়। পাচটার গাড়ী গড় গড় করে মাদলার বিলের ওপর দিয়ে চলে গেল । ঝিঙের ক্ষেতে ফুল ফুটেছে সনেকপুরের মাঠে । নোয়ালি সর্দার জাতে বুনো, সনেকপুরের মধ্যে অবস্থাপন্ন, গরুর পাল তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে গ্রাম্যপথ ধরে। ইচু সন্ধ্যার নামাজ শেষ করে উঠতেই বেড়ার ধার থেকে নোয়ালি সর্দার বললে—ও ইচু, কাল আমার জন দিতি পারব ? - CI || — কেন ? —পনেকপুরওয়ালাদের বিলির ধান কাটা হচ্ছে । —চল আমার বাড়ী, তামুক খেয়ে বাবা ।