পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আইনস্টাইন, ও ইন্দুবালা আইনস্টাইন কেন যে মার্জিলিং ঘাইতে ঘাইতে রানাঘাটে নামিয়াছিলেন বা সেখানে স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল হলে “on...ইত্যাদি ইত্যাদি সম্বন্ধে বক্তৃতা করিতে উংস্থক হইয়াছিলেন—একথা ৰলিতে পারিব না। আমি ঠিক সেই সময়ে উপস্থিত ছিলাম না । কাজেই প্রত্যক্ষদশীর বিবরণ আমি আপনাদের নিকট সরবরাহ করিতে অপরাগ, তবে আমি যেরূপ অপরের নিকট হইতে শুনিয়াছি সেরূপ বলিতে পারি। আসল কথা, নাৎসী জার্মানি হইতে নির্বাসিত হওয়ার পর হইতে বোধ হয় আইনস্টাইনের কিছু অর্থাভাব ঘটিয়াছিল, বস্তৃতা দিয়া কিছু অর্থ উপার্জন করার উদ্বেপ্তেই তার ভারতবর্ষে আগমন। বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা দিয়া বেড়াইতেছিলেনও একথা সকলেই জানেন, আমি নূতন করিয়া তাহ বলিব না । কৃষ্ণনগর কলেজের তদানীন্তন গণিতের অধ্যাপক রায় বাহাদুর নীলাম্বর চট্টোপাধ্যায় একজন উপযুক্ত লোক ছিলেন। সেনেট হলে আইনস্টাইনের অদ্ভুত বক্তৃতা “On the Unity & Universality of Forces” শুনিয়া অন্ত পাচজন চিন্তাশীল ব্যক্তিদিগের মত তিনিও অভিভূত হইয়া পড়িয়াছিলেন। তাহার কলেজে আইনস্টাইনকে আনাইয়া একদিন বক্তৃতা দেওয়াইবার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু প্রিন্সিপাল আপত্তি উত্থাপন করিলেন। তিনি বলিলেন—“না রায় বাহাদুর, আমার অন্য কোন আপত্তি নেই, কিন্তু এমন দিনে একखन छ्ांक्षीन-* রায় বাহাদুর উত্তেজিত হইয়া বলিলেন (যেমন ধরনের উত্তেজিত হইয়া তিনি উঠতেন সন্ধ্যায় রাসমোহন উকিলের বৈঠকখানায় ভাগবত পাঠের সময়, অন্য কেহ যদি কোন বিরুদ্ধ তর্ক উত্থাপন করিত )—“সে কি মহাশয় । জার্মান কি ? জার্মান ? আইনস্টাইন জার্মান ? ওঁদের মত মহামানবের, ওঁদের মত ঋষি বৈজ্ঞানিকের দেশ আছে ? জাতের গণ্ডি আছে ? আমি বলি—” গ্রিন্সিপাল বললেন—“আমিও বলছি নে যে তা আছে। কিন্তু বর্তমানে যেমন অবস্থা—” দুই প্রবীণ অধ্যাপকে ঘোর তর্ক বাধিয়া গেল। প্রিন্সিপাল দর্শন শাস্ত্রের পণ্ডিত, তিনি মধ্যযুগের স্কলাস্টিক দর্শনের প্রধান আচার্য জন ফোটাসের উদাহরণ দেখাইলেন । আয়ুৰ্লণ্ডে জন্মগ্রহণ করিয়াও নবম শতাব্দীর গোড়াদিগের দ্বারা উৎপীড়িত হইয়া ফ্রান্সে তিনি আশ্রয় গ্রহণ করিতে বাধ্য হন। আয়ৰ্গণ্ডে আর ফিরিতে পারিয়াছিলেন কি ? আসল মানুষটাকে কে দেখে । তার মতামতেরই মূল্য দেয় লোকে। বাহা হউক, শেষ পর্যন্ত যখন গ্রিন্সিপাল রাজি হইলেন না তখন রায় বাহারকে বাধ্য হই। সিরস্ত হইতে হইল। ইতিমধ্যে র্তাহার কানে গেল আইনস্টাইন শীঘ্রই জার্জিলিং যাইবেন। ভারতবর্ষে জাসিয়া অবধি নানাস্থানে বস্তৃতা দিতে ব্যস্ত থাকার দরুন তিনি হিমালয় দেখিতে পারেন নাই, এইবার এত কাছে আসিয়া আর দাৰ্জিলিং না দেখিয়া ছাড়িতেছেন না। রায় বাহাদুর ভাবিলেন দাৰ্জিলিঙের পথে রানাঘাটে নামাইয়া লইয়া সেখানে এক সভায়