পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার & —-অারে, ওই লাল মুটকেসট, ওই যে গামছা-বাধা, দাও নামিয়ে । —লামাল লামাল, এই ভাল করে ধর, কঁচের জিনিস আছে ভেতরে। o —ওটা না ওটা না, ওই টিনেরটা, লেখা আছে—আর সি ডি,--ই ওইটে— আসাম মেল এসে দাড়াল। যাত্রীর দল মোটঘাট নিয়ে উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটেছে। প্রতুলের মোটে একটা টিনের সুটকেস আর একটা বিছানা, তত ভারীও নয়, নিজেই সেটা হাতে করে ছুটল টিকিটঘরের দিকে-কুলির হাতে দিলেই এখুনি আবার চারটে পয়সা । আসাম মেলে তর্ত ভিড় ছিল না, কিন্তু পাৰ্ব্বতীপুর থেকে বে শিলং মেল ছাড়ল, সেট। আসছে লখনউ বা কানপুর থেকে ; হিন্দুস্থানী যাত্রীরা আসামের দিকে চলেছে শীতকালের প্রথমে বিভিন্ন চা-বাগানে কাজ করতে, তাদের ভিড়ে দাড়াবার জায়গা পৰ্য্যস্ত নেই ট্রেনে । রঙ্গিয়া জংশনে ভোরবেলা ট্রেন পৌছল। এখান থেকে ষোল মাইল দূরে ভাটিখালি চ-বাগান। প্রতুল ডাক্তাৰী করে, বছরখানেক এই চাকরিটাতে ঢুকেছে, ফ্রী কোয়ার্টার দিয়েছে চা-বাগান থেকে, জিনিসপত্র সস্তা, এক রকম চলে যাচ্ছে । রঙ্গিয়ায় নেমে আবার মোটর-বাস। বাগানের ফু মাইল তফাৎ দিয়ে রাঙাপাড়া রোড দিয়ে বাস চলে গেল। এইটুকু পথ একজন কুলির মাথায় মুটকেসটা চাপিয়ে বেলা সাড়ে নটা আন্দাজ প্রতুল চা-বাগানে নিজের কোয়ার্টারে এসে উঠল। বড় নির্জন জায়গা। দূরে অচ্চ নীল পাহাড় মেঘের মত দেখা যায়। একদিকে খুব বড় একটা জলা, নলখাগড়া বনে ঘেরা। হেমস্তের সকাল বেলা একটা আদ্র অপ্রীতিকর বাষ্প যেন উঠছে জলাটা থেকে । ম্যালেরিয়া ও কালাজরের ডিপো এই চা-বাগানগুলো । প্রতুল নিজেও কয়েকবার ম্যালেরিয়ায় পড়েছে এখানে এসে পৰ্য্যস্ত। ডাক্তারখানায় আসামী কম্পাউণ্ডার শিবনাথ ভট্টাচাৰ্য্য একাধারে ডাক্তারখানার কম্পাউণ্ডার ও প্রতুলের পাচক। প্রতুল নিজে রাধতে জানেও না, ও-কাজ তার পোষায়ও ন, মুতরাং শিবনাথকে খোরাকি দিয়েও রাখতে হয়েছে। ডাক্তারখানার চাকর ছুটে এল ডাক্তারবাবুকে আসতে দেখে। প্রতুল তাকে জিজ্ঞেস করে জানলে, শিবনাথ তার বাড়ী গিয়েছে ছুদিনের ছুটি নিয়ে, পরশু আসবে। শুধু বাবার তাড়াতাড়িতে আজ আসতে হোল প্রতুলের, নয়তে পরশুই তো সে আসত। 聽 ডাক্তারখানার চাকরকে বললে—ওরে ভীম, তুই জল তুলে দে আমার নাইবার আর রান্না করবার। যখন কষ্ট পেতে হবে দু দিম, তাড়াতাড়ি যা— । কোন কেস ছিল এ কদিন ? ছিল না ? চাবিটা নিয়ে গিয়ে ডাক্তারখানা বীট দিয়ে রাখ গে। স্বানের পূৰ্ব্বে মুটকেস খুলতে গিয়ে সে দেখলে স্বটকেসের গায়ে অন্ত কি একটা তালা লাগানে, তার চাবি নেই ওর কাছে। আঃ কি বিপদ, এ ঠিক তার বোন কমলার কাজ। সে-ই কাল আসবার সময়ে বাক্স গুছিয়ে দিয়েছিল, কিসের তালা কিসেলাগিয়ে বসে আছে!