পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So বিভূতি-রচনাবলী পরদিন লোক পাঠিয়ে সে সুটকেসটি রেলে বুক করে দিলে এবং তার নিজের সুটকেসটিও সে-সপ্তাহের শেষে একদিন অক্ষত অবস্থায় কুলির মাথার চেপে তার কোয়ার্টারে এলে পৌছল। জিনিসপত্র নড়াচাড়া হয়েছে বটে, কিন্তু ঠিক আছে, এমন কি চিড়ে ও তালের পাটালি পৰ্য্যস্ত। ব্যাপারটা বেমালুম মিটে গেল। এর পর আর কি ঘটতে পারে ? কিছুই না। প্রতুল কিন্তু কিছুতেই মেয়েটির কথা একেবারে ভুলতে পারলে না। তার তরুণ জীবনে এই প্রথম নারী-সংক্রাপ্ত ঘটনা। রোমান্স না হলেও রোমান্সের কল্পনা মনে জাগে বই কি ! বিশেষত চা-বাগানের এই নির্জন জীবনে। তা ছাড়া, কোন মেয়ে ছিল এটি ? সেই বালুরঘাটের ? মেয়েটির কাছ থেকে একথান। ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি আসবে এ আশাও প্রতুলের ছিল। তা আসেনি। পাচ মাস পরে প্রতুল আবার ছুটি নিয়ে বাড়ী রওনা হোল। অনেকদিন দেশে যায়নি, মনটা ব্যাকুল ছিল আত্মীয়স্বজনকে দেখবার জন্তে । ওর বোন কমলাকে ও বড় ভালবাসে । কমলার বিবাহের কথাবার্তা চলেছে, সামনের বৈশাখেই বোধ হয় বিয়ে হয়েও যাবে। তার আগে কমলাকে নিজেদের মধ্যে আপন ভাবে দিনকতক পেতে চায় । সেজন্তে আরও বিশেষ করে বাড়ী যাওয়া দরকার। ছিলি স্টেশনে নেমে বসে থাকতে হোল । একথানি আপ ট্রেন এলে তারও যাত্রী নিয়ে তবে মোটর-বাস ছাড়বে । « , প্ল্যাটফর্মে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে করতে কলকাতার ট্রেন এসে পৌছল। যাত্রীর ভিড় তেমন ছিল না, কয়েকটি মাত্র লোক ট্রেন থেকে নামল । হঠাৎ প্রতুল থমকে দাড়াল—বালুরঘাটের সেই তরুণী কলেজের ছাত্রীটি এক ট্রেন থেকে নামছে । ওর হাতের দিকে চেয়ে কিন্তু সে চক্ষে অন্ধকার দেখলে কিছুক্ষণের জন্তে । ট্রেনের দরজা থেকে কুলি যে সুটকেসটাকে মাথায় চাপিয়ে নিলে মেয়েটির—সেটি তার অত্যন্ত পরিচিত সে সুটকেসটি নয়। সেটি ছিল টিনের, আর এটি চামড়ার বড় একটা সুটকেস । মোটর-বাস ছাড়বার সময় নেই বেশি। প্ল্যাটফর্মে নেমে মেয়েটি একবার চারিদিকে চেয়ে দেখলে, যেন একটু হতাশ হয়ে পড়ল । মোটর-বালে ওঠবার সময় প্রতুল শুনলে মেয়েটি কওকিটরকে বললে—বালুরঘাটের লাবডেপুটিবাবুর বাড়ী থেকে কোনও লোক আসেনি ? কওকটর বললে—ডিপুটি লাব ? নেহি মাইজি। আপ উঠিয়ে হরজ কেয়, বালুরঘাট মে উত্তর দেগা। বাস চলছে। যেয়েটির প্রতি ঔদাসীষ্ঠ এসে গিয়েছে প্রতুলের, সে অঙ্গ দিকে চেয়ে অাছে,