পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ጏ¢ স্বপ্নে কি এমন সব ব্যাপার ঘটে ? স্বপ্ন যদি না হয় তবে কি সে পাগল হয়ে গেল ? তাই বা কেমন করে হয়, তবে পুষ্প আসে কোথা থেকে ? কিম্বা সবটাই মনের ধাধা—hallucina tion ? * না—একেই বলে মৃত্যু ? এরই নাম যদি মৃত্যু হয় তবে লোকে এত ভয় করে কেন ? কেউ তো কখনো তাকে বলেনি যে মৃত্যুর পরে মানুষ জীবিত থাকে—বরং তার মনে হচ্চে সে আরও বেশি জীবন্ত হয়েচে–বেঁচেই বরং রোগের যন্ত্রণায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল । হঠাৎ যতীন দেখলে যে সে এক নতুন দেশে এসেচে-দেশটা পৃথিবীর মতই। তাঁর পায়ের তলায় নদী, গাছপালা,মাঠ, সবই আছে—কিন্তু তাদের সৌন্দর্য অনেক বেশি। আকাশের দিকে চেয়ে দেখলে, সূর্য দেখা যায় না—অথচ অন্ধকারও নেই–ভারি চমৎকার এক ধরনের অপার্থিব মৃদু আলোকে সমগ্র দেশটা উদ্ভাসিত । গাছপালার পাতা ঘন সবুজ, নানাধরনের ফুল, সেগুলো যেন আলো দিয়ে তৈরী । 验 এক জায়গায় এসে পুষ্প থামলো । একি ! এ তো সেই পুরোনো দিনের কেওটা-সাগঞ্জের বুড়োশিবতলার ঘাট। ঐ গঙ্গ। ঐ সেই প্রাচীন অশ্বখ গাছটা । ঐ তো বুড়োশিবের ভাঙা মন্দিরটা। পৃথিবীতে মাঝে মাঝে গোধূলির সময় মেঘলা আকাশে যেমন একটা অদ্ভুত হলদে আলো হয়, ঠিক তেমনি একটা মৃদু, তাপহীন, চাপ আলো গাছপালায়, গঙ্গার জলে, বুড়োশিবের মন্দিরের চুড়োয় । ওকে ঘাটের সোপানে একা বসিয়ে পুষ্প কোথায় চলে গেল। যতীন চুপ করে বসে অদ্ভুত আলোকে রঙীন গঙ্গাবক্ষের দিকে চেয়ে রইল। বাল্যের শত মুখের, শত আনন্দন্থতির রঙ্গস্থল সেই পুরোনো জায়গা--ঐ তো ওপারে শু্যামান্বন্দরীর ঘাট, হ্যামাসুন্দরীর মন্দির । কিন্তু আশ্চর্য এই যে, কোনো দিকে আর কোনো লোকজন নেই। এতখানি সুবিস্তীর্ণ স্থান একেবারে নির্জন । কেউ কোথাও নেই সে ছাড়া ! এমন সময়ে অশ্বখ গাছের তলায় সেই প্রাচীন পথটা দিয়ে পুষ্পকে আসতে দেখা গেল । র্তার খোপায় কি একটা ফুলের মালা জড়ানো । যতীন বল্লে—এ কোথায় আনলি পুষ্প ? বুড়োশিবতলার ঘাট না ? এ কি সাগঞ্জ-কেওট ? পুষ্প যে সত্যিই দেবী, যতীন তার দিকে চেয়ে সেটা এবার ভালভাবেই বুঝতে পারলে। এমন গাঢ়যৌবনা, শাস্ত আনন্দময়ী মূর্তি মানবীর হয় না—কি রূপই তার ফুটেচে। কি জ্যোতির্ময় মুখঐ! যতীন অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইল। পুষ্প বল্লে—না যতুদা—এ স্বর্গ। সকলের স্বর্গ তো এক নয় . তারপর মৃদু হেসে সলজ স্বরে ওর মুখের দিকে চেয়ে বল্পে—এ আমাদের স্বৰ্গ—তোমার আর আমার স্বৰ্গ । 曲