পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? যতীনকে পুষ্প একটা ছোটখাটো স্বন্দর বাড়ীতে নিয়ে গেল। সে বাড়ী ইট-কাটের তৈরী নয়, যেন মনে হোল এক ধরনের মার্বেল পাথরে তৈরী, কিন্তু মার্বেল পাথরও নয় সে জিনিস। বাড়ীর চারিধারে ফুলের বাগান, সবুজ ঘাসের মাঠ। দূরে গঙ্গা দেখা যাচ্ছে । পুষ্প বল্পে—এসব আমার তৈরী ; জানো আমি এদেশে এসেচি আজি আঠারো বছর, তোমার অপেক্ষায় ঘর সাজিয়ে বসে আছি। ‘পৃথিবীতে কেওটার গঙ্গার ঘাটের চেয়ে প্রিয়তর আমার আর কিছু ছিল না। এখানে এসে কল্পনায় তাই স্বষ্টি করেচি। এখানে যার যা ইচ্ছে কল্পনায় গড়ে নিতে পারে। এই বাড়ীও আমার কল্পনায় তৈরী। যতীন বঙ্গে—কেমন করে হয় ? —এদেশের বস্তুর ওপর চিন্তার শক্তি খুব বেশী ! পৃথিবীর বস্তুর মত এখানকার বস্তু নয় । আরও অনেক স্বক্ষ—অন্য ধরণের, সে পরে নিজেই টের পাবে চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করতে তোমাকেও শিখতে হবে—স্বষ্টি করতে হোলে পৃথিবীতেও যেমনি চিন্তার দরকার, এখানে তার চেয়েও বেশি দরকার। চিস্তার শক্তিকে যে বাড়াতে পেরেছে, ইচ্ছামত চালাতে পারে, সে এদেশের বড় কারিগর। কিন্তু এও যে বস্তু, সে বিষয়ে ভুল নেই ; পৃথিবীর মানুষ যাকে চেনে, সে বস্তু নয়—ত হোলেও বস্তুই । —আমার বাবা-মা কোথায় পুষ্প ? —এখনই আসবেন । অমুখের সময় তোমার মা আর আমি তোমার শিয়রে বসে থাকৃতাম । র্তারা অন্য জায়গায় থাকেন। পৃথিবী থেকে ভোর্মাকে আনতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সস্তানের মরণের দৃপ্ত তাদের দেখতে কষ্ট হবে ভেবে আমিই র্তাদের যেতে বারণ করি। তোমার পৃথিবীর দেহটা বডড খারাপ দেখতে হয়ে গিয়েছিল মরণের আগে—ম গো, ভাবলে ভয় করে । যতীন বল্লে—আর তোমাদের দেখলে আমার ভয় হচ্চে না ? তোমরা যে ভূত, সেটা খেয়াল আছে ? পুষ্প বল্লে—সে তো তুমিও । যতীন বল্লে—এদেশে আর সব লোক গেল কোথায় পুষ্প ? এখানে কি তুমি আর আমি দুটি প্রাণী ? তোমার বাবা-মা কোথায় ? পুষ্প হেসে বল্পে—এটা তৃতীয় স্তরের ওপরের অঞ্চল। , তুমি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েচ বলে এখানে আসতে পেরেচ –আর এসেচ আমি এখানে তোমায় ডেকেচি, ভগবানের কাছে কত প্রার্থনা করেচি তোমার দুঃখের দিনের অবসানের জন্তে । সে সব কথা তুমি কি জানো ? নইলে সাধারণ লোক মরার পরে এ জায়গায় আসতে পারে না। আমার বাবা এখনও মনে নি, খুব বুড়ে হয়েচেন, কালনায় আছেন, আমাদের দেশে । মা অনেক বছর স্বর্গে এসেচেন বটে, কিন্তু তিনি অন্য জায়গায় মুছেন। এ স্তরের নিয়ম এই যে তুমি যদি ইচ্ছে করে। তুমি