পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీe বিভূতি-রচনাবলী নবীনদা হাসিয়া মনের আনন্দে একটা ভাটিয়ালি গান বেমুরে গাহিয়া ফেলিলেন। মিস সোরাবজিকে ইংরেজিতে তাহার অর্থও বুঝাইয়া দেওয়া হইল। গানে, গল্পে, কবিতা আবৃত্তিতে হাসিখুশিতে সারাদিনটা কাটাইয়া রাত্রে যখন বাড়ী আসিয়া শুইয়া পড়িলাম—তখন যেন মাথার মধ্যে উগ্ৰ মদের নেশা। নবীনদাবও তাই, কারণ—তিনি আসিয়া পৰ্য্যন্ত গুন গুন করিয়া গান করিতেছিলেন । মিস সোরাবজির বিবাহের অল্পদিন পরেই আমরা দুই বন্ধু নাগপুর হইতে চলিযা গেলাম। বছরখানেক পরে আবার একবার বিশেষ কাজে নাগপুরে আসি । i সংবাদ লইয়া শুনিলাম বুদ্ধ ডাক্তার সোরাবজি ইতিমধ্যে মারা গিয়াছেন। র্তাহার পরিবারবর্গ কেহই এখানে নাই—বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে তাহারা বোম্বাই চলিয়া গিয়াছে। মুলোর খবর জানিবার বিশেষ ইচ্ছা সত্ত্বেও আমরা কাহাকে তার কথা জিজ্ঞাসা করিব বুঝিতে পারিলাম না। ডাক্তার সোরাবজি শহরের বিশিষ্ট নাগরিক হিসাবে সকলের নিকটই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু মূলে জনৈক বিদেশী তরুণ ছাত্র—অমন ছাত্র নাগপুরে বহু আছে— কে কাহার খবর রাখে! আমরা ছাড়া আর সে কাহার সঙ্গে মিশিত জানি না, সুতরাং মুলোর খোজ লইবার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উপায় হইল না। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, সপ্তাহখানেকের মধ্যে একদিন অপ্রত্যাশিতভাবে গোরেওয়ারা হ্রদে বেড়াইতে গিয়া মূলোর দেখা পাইলাম। নবীনদা তাহাকে প্রথম দেখেন। একখানা পাথরে ঠেস দিয়া কে একজন নির্জনে বসিয়া আছে দেখিয়া নবীনদাই বলিলেন—ওখানে কে দেখ তো হে! গোরেওয়ার শহর হইতে বহুদূরে, এত দুরে কেহ বেড়াইতে আসে না সাধারণত—স্থানটাও নির্জন পাহাড়-জঙ্গলের মধ্যে। আমি একটু কাছে গিয়া দেখি—মুলো ! নিখুঁত সাহেবী পোশাক পরা সেই রকমই, তবে দাড়ি কামায় নাই, মাথায় চুল ছোট করিয়া ছাট । ভাল করিয়া লক্ষ্য করিয়া দেখিলাম—মূলো একখানা খাতাতে কি লিখিতেছে। এত নিবিষ্টমনে লিখিতেছে যে, আমার পদশক সে শুনিতে পাইল না। কবি হইয়া গেল নাকি ছোকরা ? তাহার পর আমাদের সঙ্গে সে নাগপুরে ফিরিল । শুনিলাম সে এবারও পরীক্ষায় পাশ করিতে পারে নাই। আমাদের পাইয়া মূলে ছেলেমানুষের মত খুনী। চাপেবার ছদ্ধমন্দিরে লইয়া গিয়া আমাদের মিষ্টান্ন শরবত খাওয়াইয়া দিল। শুনিলাম দেশে তাহার মা মারা গিয়াছেন এই বৎসরেই। 畿 & বলিল-বড় একলা একল বোধ করি এখানে । মিশব কার সঙ্গে ? এখানে মেশবার লোক নেই। বাঙালীদের সঙ্গে মিশে আরাম। গোরেওয়ার লেকে মাঝে মাঝে গিয়ে বসে থাকি । বেশ লাগে। একদিন ওখানে বেশ কেটেছিল। মনে আছে সেই আমাদের পিকনিক ? ওরী কোথায় যে তা তো জানি নে ।