পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৩৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধু মাষ্টার ●● ঘাটের কাছাকাছি বয়স, গায়ে আধময়লা পিরান, পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো—বগলে এক তাড়া বই বা কাগজ । 聯 আগন্তুক বলল—আমায় চিনতে পারলেন না ? আমাকে সকলে কুণ্ডু মশাই বলে জানে। বসাকদের কাপড়ের গুদোমে কাজ করি বল্লভপুরের বাজারে । তা আপনার দেশে ঘরে থাকেন না, গরমের ছুটির পরই চলে যাবেন—চিনবেন কি করে। কথাটা সত্যি। দেশে থাকলে চিনতাম বই কি—দেশেরই লোক যখন । বললাম—কি জন্যে আসা হয়েছে ? —আপনি একজন রাইটার লোক, আমার লেখা কবিতা কিছু আপনাকে আজ শোনাতে এসেছি । —ও, বক্ষন বসুন। সে বেশ কথা । দাডান একটা কিছু পাতি । দস্তুরমত অবাক হয়ে গেলাম। বল্লভপুরের বাজার এখান থেকে দু মাইলের সামান্ত কিছু বেশি, এত রাত্রে নিছক কবিতা শোনাতে লোকটা কষ্ট করে এতদূর এসেছে—না, এমন ব্যাপার যে দেখিনি আদেী একথা বললে ভুল হবে—জীবনে বার কয়েক এ প্রকৃতির মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছে এবং আমি এদের ভালও বাসি । এর সরস্বতীর নিঃস্বার্থ সেবক, এরা যশ পায় না, অর্থ তো পায়ই না—লেখার নেশায় লিখে যায়, যশের পরিবর্তে পায় অল্পশিক্ষিত জনসাধারণের ব্যঙ্গ বিদ্রপ—তবু মদ ধরলে যেমন ছাড়া কঠিন হয়, তেমনই কঠিন হয়ে পডে লেখার বাতিক মাথায় একবার ঢুকলে তাকে তাড়ানো । এ সবই আমি জানি । বললাম যে, এ ধরনের লোক এর আগেও আমি দেখেছি । সুতরাং একেও যত্ন করে বসালাম । বাড়ীতে থাকি আমি একা, দ্বিতীয় প্রাণী কেউ নেই— নতুবা একটু চা খাওয়ালে দেখাত ভাল। কুণ্ডু মশায় তার দপ্তর খুলে তিনখানা মোটা খাতা বার করে পড়ে যেতে লাগলেন অবিরাম একটানা । এসব দলের লোকেরা তাই করে থাকে । আমি কতবার কত জায়গায় দেখেছি । মাঝে মাঝে আমার মুখের দিকে চেয়ে বলছিলেন—কেমন লাগছে শু্যামবাৰু ? —চমৎকার ! - —াইছে—আপনার রাইটার লোক, আপনাদের ভাল লাগলেই– তার পর শুম্বন এটা, 'সুভদ্রা-হরণ’— —পড়ে যান । • একটানা চলেছে আবৃত্তির স্রোত—রাত বারটা বেজে গেল। কুণ্ডু মশার নাকের চশমা নামিয়ে আমার মুখের দিকে হাসি-হাসি মুখে চেয়ে বললেন— কেমন ? অর্থাৎ এটা আপনার ভাল লাগতেই হবে, উপায় নেই। পুনরায় বললাম—চমৎকার!