পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిని বিভূতি-রচনাবলী আপন মালীমাদের মুখে । তাও তত বেশি করে নয় বা তত ঘন ঘন নয়, বাল্যকালে যেমন দিদিমার মুখ থেকে শুনতুম। . কিন্তু তা বলে মুহাসিনী মাসীমা কি আমার মনে ছোট হয়ে গিয়েছিলেন । আশ্চর্য্যের বিষয়, তা মোটেই নয়। বাল্যের সে মানসী প্রতিমা যেমন তেমনই ছিল, তার রূপের কোথাও একটুকু মান হয় নি। বন্ধুবান্ধবের বিয়েতে নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে কত নববধূকে সেই মানসী প্রতিমার কষ্টি-পাথরে যাচাই করতে গিয়ে তাদের প্রতি অবিচার করেছি। বয়স যখন ত্রিশ-বত্রিশ, তখন কলকাতায় এসে থাকতে হল কাৰ্য্য উপলক্ষে। একদিন আমার মামার মুখে কথায় কথায় শুনলাম—মুহাসিনী মাসীমার স্বামী এখন বড় এঞ্জিনীয়ার, অনেক টাকা রোজগার করেন, বাগবাজারে নবীন বোসের লেনে সম্প্রতি বাসা করে আছেন। এমন কি মামা বললেন—যাবি একদিন ? মুহাস"দিদির সঙ্গে আমারও অনেকদিন দেখা হয় নি। তুই কখনও দেখেছিল কি ? চল, কাল যাওয়া যাক, ঠিকানাটা আমার ডায়েরিতে লেখL আছে । পরদিন আমার কি একটা গুরুতর কাজ ছিল, তাতেই যাওয়া হল না। মামাও আর সে সম্বন্ধে কোন কথা উত্থাপন করলেন না। আমি ইচ্ছে করলে একাই যেতে পারতাম—মামা ঠিকানাটা আমায় বলেছিলেন তার পর, কিন্তু তারা আমায় কেউ চেনে না, এ অবস্থায় যেচে সেখানে যেতে বাধত । আরও বছর দুই-তিন কেটে গেল। আমার বয়স চৌত্রিশ। সংসারী মানুষ, ছেলেপূলে হয়ে পড়েচে অনেকগুলি। পশ্চিমের কৰ্ম্মস্থান থেকে দেশে ঘন ঘন আসা ঘটে না । এ সময় একবার মামার বাড়ীর গ্রামের কানাই মামার সঙ্গে জামালপুর স্টেশনে দেখা। কানাই আমার বাল্যবন্ধু এবং সুহাসিনী মাসীমার ছোট ভাই । —কি হে, কানাই মামা যে ! এখানে কোথায় ? —আরে শচীন যে! তুমি কোথায়? আমি এখানে আছি বছরখানেক ওয়ার্কশপে কাজ করি। " —বেশ, বেশ । বাসা করে মেয়েছেলে নিয়ে আছ ? —ন, দিদি মুঙ্গেরে রয়েছে কিনা, জামাইবাবুর, শরীর খারাপ, চেঞ্জে এসেছে। সেখান থেকেই যুাতায়াত করি। এস না একদিন ? বেলুন বাজারে, গঙ্গার কাছেই। কবে আসবে ? অামি থাকি সাহেবগঞ্জে। সৰ্ব্বদা মুঙ্গেরের দিকে যাওয়া ঘটে না—তবু কানাইএর কাছে কথা দিলাম একদিন মুহাসিনী মীমার বাসায় যাব মুঙ্গেরে।--সেটা কৰ্ত্তব্যও তো বটে, দেশের লোক অমুস্থ হয়ে রয়েছেন দূর দেশে—আমরা যখন এদেশ-প্রবাসী—যাওয়া বা দেখাশুনো করা তো উচিতই। সাহেবগঞ্জে ফিরে এসে স্ত্রীকে কথাটা বলতে সেও খুব উৎসাহ দেখালে ।