পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান Q(t এখানে অনেকদিন আছে তারাও জানে না । আমি শুনেছিলাম এক শুদ্ধ আত্মার কাছে, যার কাছে তোমায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বলেন সপ্তম স্তর পর্যন্ত আছে, যেখানে পৃথিবীর মানুষ যেতে পারে। তার ওপরেও অসংখ্য স্তর আছে, তৰে সে সব অঞ্চলের খৰর তিনিও জানেন' না । সে সব পৃথিবীর মামুষের জন্য নয় । —আর আমি চতুর্থ স্তর ছাড়িয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়লাম ! —তা যদি না হোত, আমি বৌদিকে এনে তোমার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতাম । যতীন আগ্রহের সঙ্গে কিন্তু কিছু অবিশ্বাসের স্বরে বল্লে, আশাকে ? কি করে ? —সে ঘুমিয়ে পড়লে তার স্বক্ষ দেহ স্কুল দেহ থেকে বার করে। এ রকম করা যায়, আমি, করতেও জানি। কিন্তু বৌদিদির কোন জ্ঞান থাকবে না, যখন তাকে এখানে আনা হবে। তোমার মত অচৈতন্য হয়ে যাবে, দ্বিতীয় স্তর পার না হতেই। এই এ জগতের নিয়ম। যে স্তরের যে উপযুক্ত নয়, সে স্তরে পৌঁছুলে তার চেতনা লোপ পায় । কার সঙ্গে কথা কইবে যতুদা ? —কোনো উপায় নেই পুপ ? আমরা পৃথিবীতে গিয়ে দেখা দিতে পারি নে ? —প্রথমত, তা পারা অত্যস্ত কষ্টসাধ্য। আর যদিও বা পারা যায়, তাতেও কোনো ফল হবে না । বৌদিদি পাড়াগায়ের অশিক্ষিত মেয়ে, মানুষ ময়ে কোথায় যায়, তাদের কি অবস্থা হয়, এসব সম্বন্ধে কিছু জানে না। মন কুসংস্কারে পূর্ণ। তোমায় দেখে সে এমনি ভয় পাবে যে তোমার যে জন্যে যাওয়া বা দেখা দেওয়া, তা হবে না । যতীন কিছুতেই ছাড়ে না। তার সনির্বন্ধ অনুরোধে পুষ্প অবশেষে ওকে আশার কাছে নিয়ে গিয়ে চেষ্টা করে দেখতে রাজী হোল ৷ যতীন বল্পে, আজই চলে । পুপ ঘাড় নেড়ে বল্পে—এখন শুক্লপক্ষের জ্যোৎস্নারাত্রি পৃথিবীতে। ওর আলোর ঢেউ আমাদের দেহ ধারণ করে দেখা দেওয়ার পক্ষে বড় বাধা । কৃষ্ণপক্ষের রাত্রিতে অনেক সহজ হবে । ক’টা দিন সবুর করো না ! তারপর একদিন ওরা কৃষ্ণাসপ্তমী তিথিতে দুজনে পৃথিবীতে নেমে গেল। যতীন নতুন পৃথিবী থেকে গিয়েচে, সে স্পষ্টই সব দেখতে লাগলো, কিন্তু পুপ অনেক দিন উচ্চস্তরে কাটানোর ফলে ওয় সৰ ঝাপসা, অস্পষ্ট কুয়াসার মত ঠেকচে । পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তার কষ্ট হতে লাগলো । ওরা বেশি রাত্রে আসে নি, কারণ আশা তখন ঘুমিয়ে পড়বে, ওদের দেখবে কি করে ? পুপ বল্লে—খুব ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে। খুব জোর করে ভাবে যে আমি আশাকে দেখা দেবে, দেবে, দেবো। তুমি রেশিদিন পৃথিবী ছেড়ে যাওনি, তোমার দেহ স্থলচোখে দেখা যাবে তা হোলে । 嫁 পৃথিবীর হিসেবে দুঘণ্টা প্রাণপণে চেষ্টা করেও যতীন নিজের দেহ কিছুতেই আশার চোথে দৃপ্তমান করতে পারলে না। আশা রান্নাঘরে যাচ্ছে আলচে, ছেলেদের খাইয়ে আঁচিয়ে দিলে, ঘরে গিয়ে বাবার জন্যে পান সাজলে, দোতলার ঘরে এক গিয়ে ছেলেমেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এল। যতীন সব সময় ওর পাশে পাশে সামনে, রোয়াকে, ঘরে, দোতলায় উঠবার গিড়িতে