পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী w१ عياده দিয়ে গিয়েচে বাড়ীর ৰি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি বাইরে বসে অনেকক্ষণ রোগীর বিষয় চিন্তা করলাম, কাল সকালে কি কি অনুপান দরকার হবে, সেগুলো মনে-মনে ঠিক করে রাখলাম। তারপর এসে গুয়ে পড়তে যাবে, এমন সময়ে দেখি জ্যোৎস্নালোকিত মাঠ দিয়ে কে * একজন সাদা-কাপড় পরা স্ত্রীলোক এদিকে আসচে । রাত তখন অনেক ! এত রাতে একা কে মেয়ে এদিকে আসচে বুঝতে পারলাম না । মেয়েটি এসে দেউড়ি দিয়ে বাড়ীর মধ্যে ঢুকলো । পনেরো মিনিটের মধ্যেই আবার সে বার হয়ে মাঠের দিকে চলে গেল। আমি ভাবলাম, আমলাদের বাড়ী থেকে যদি কোনো স্ত্রীলোক রোগীকে দেখতে আসে, তবে এত রাত্রে আসবে কেন ? একাই বা আসবে কেন ?--ঘড়িতে ঢং ঢং করে বারোটা বাজলো দেউড়িতে | এমন সময়ে বাড়ির ভেতর থেকে আমার ডাক এলো—রোগীর অবস্থা খারাপ, শীগগির যেন যাই । আমি তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম রোগীর শয্যার পাশে । সত্যি রোগীব অবস্থা এত খারাপ হলো কি করে ? দেড় ঘণ্ট আগেও দেখে গিয়েচি রোগী বেশ আরামে ঘুমুচ্চে, এখন তার জর বড় নেমে গিয়েচে, অথচ চোখ দুটো জবাফুলের মত লাল, নাড়ির অবস্থা খারাপ। জর এত কম দেখে ঘাবড়ে গেলাম। বেজায় ঘামতে শুরু করেচে রোগী। মস্ত বড় সঙ্কটজনক অবস্থার মুখে এসে পড়লো কেন এভাবে छ्ठां९ ? তক্ষুনি কাজে লেগে যাই । আমিও ত্রিপুরা কবিরাজের ছেলে, উপযুক্ত গুরুর শিষ্য ; দমবার পাত্র নই। ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যে রোগীকে চাঙ্গা করে তুলে শেষ রাত্রে ক্লান্ত দেহে বাইরের ঘরে বিশ্রাম করতে গেলাম । 龜 এক ঘুমে একেবারে বেলা আটটা। উঠে রোগী দেখে এলাম, বেশ অবস্থা, কোনো খারাপ উপসর্গ নেই। সারাদিন এক ভাবেই কাটলো। রোগীর অবস্থা দেখে বাড়ীর সকলে খুব খুশি । আমার সারাদিনের মধ্যে বিশেষ কোনো খাটুনি নেই। দুপুরবেলা খুব ঘুম দিলাম। বিকেলে— এমন কি বড় পুকুরে মাছ ধরতে গেলাম আমলাদের মধ্যে একজন ভালো বৰ্শেলের সঙ্গে । সেরখানেক একটা পোনা মাছও ধরলাম। মনে খুব ফুর্তি । সেদিন রাত্রে বাইরের ঘরে শুয়ে আছি, এমন সময়ে দেখি দূরে মাঠের দিক থেকে যেন সেই স্ত্রীলোকটি এদিকে আসচে ! আজ সারাদিনের মধ্যে মেয়েটির কথা একবারও আমার মনে হয় নি। এখন আবার তাকে আগতে দেখে ভাবলাম ইনি নিশ্চয় এদের কোনো আত্মীয় হবেন, দূর গ্রাম থেকে দেখতে আসেন ঘরের কাজকর্ম সেরে। কিন্তু একা আসেন কেন ?