পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিনন্দন-সভা এবার দেশে গিয়ে দেখি, গোঁর পিওন পেনসন নিয়েচে । কতকাল পরে ? বহুদিন-- বহুদিন । বায়ুমণ্ডলে যখন প্রজলন্ত উল্কা ছুটে চলে, তখন গোটা ফটোগ্রাফ প্লেটটা সে এক সেকেণ্ডে পার হয়ে যায়। কিন্তু ছ-ঘণ্টা কি সাত ঘণ্টা ঠায় আকাশের দিকে ক্যামেরার মুখ ফিরিয়ে রাখলেও, নীহারিকা একচুল নড়ে না। গোঁর পিওন (গৌরচন্দ্র হালদার, জেলে ) আমাদের জীবনে সেই বহুদূরবর্তী নীহারিকার মতো অনড় ও আচল অবস্থায় এক ডাকঘরে, এক ডাকের ব্যাগ ঘাড়ে পয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর ডাকহরকরার কাজ করে আসচে। মধ্যে তিন বছরের জন্যে সে কেবল কোটচাঁদপুর গিয়েছিল, তাও তার মন সেখানে টেকে নি । ওভারসিয়ারের কাছে কান্নাকাটি করে আবার চলে এসেছিল আমাদের এই ডাকঘরে । ১৯১২ সালের ৭ই জুলাই সে প্রথম ভর্তি হয়েছিল এখানকার ডাকঘরে । 霞 তার মুখেই শুনেচি, আমি তখন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। বাবা বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতেন, ও আমাদের বাড়ী এসে বলতে—টীকা নিয়ে যান বাবাঠাকুর ! আমি বলতাম—ক-টাকা ? —ন-টাকা । —কোন ডাকঘর থেকে ? —বহরমপুর । একবার এক বুডে-পিওন আমাদের গায়ের বিটে বদলি হোলে, গোঁর পিওনের পড়লো অন্ত বিট। বুডো বাড়ী এসে আগেই বলতো–কট হর নিয়ে এসো। সড়া কট হর দেবে না, আচ্ছা কট হর নিয়ে এসো—খাবো । 豪 তার নাম পড়েজি। হিন্দুস্থানী ব্রাহ্মণ। অনেকদিন এদিকে ছিল । অমনিধারা বাংলা বলতো ! কিন্তু তার দোষ ছিল, দূরের গায়ের চিঠি থাকলে হাটবার ভয়ে যেতো না। একবার বাওড়ের ধারের ঝোপ থেকে এই রকম অনেক চিঠি কুড়িয়ে পাওয়া যায়। বুড়ে৷ পাডেজির নামে নালিশ গেল ওপরে। তাকে এখান থেকে বদলি করে দিলে । গোঁর পিওন এলো এরই পরে। সেই থেকেই ও এখানে আছে, মাত্র তিন বছর ছাড়া। গোঁর পিওন তিন-চার বছর কাজ করবার পরই আমি গ্রাম ছেড়ে চলে গেলাম। পুনরায় ফিরলাম, দীর্ঘ আঠারো বছর পরে । সেদিনই বিকেলে দেখি, গোঁর পিওন চিঠি বিলি করতে এলো আমাদের বাড়ী । সত্যি আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি আশা করি নি, এতকাল পরে সেই বালোর গোঁর পিওন পুরনো দিনের মত চিঠি বিলি করতে আসবে।