পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছায়াছবি 'එළී গোঁর উঠোন থেকে রোয়াকে উঠে এসে বললে—প্ৰাতঃপেন্নাম বাবাঠাকুর । —গৌর যে ! ভালো আছে ? এখনো তুমি এখানে ডাক বিলি কব্লচে ? —আপনাদের আশীব্বাদে এক রকম চলে যাচ্চে বাবাঠাকুর। বাড়ী ঘর আপনার একেবাবু নষ্ট হয়ে যেতে বসেছিল যে, না থাকার জন্তে । গোঁর কিন্তু অবিকল সেই রকম আছে । বয়েস ষাটের কাছাকাছি হোলো হিসেব মত । গবর্নমেন্টের খাতায় যে বয়েসই লেখা থাকুক না কেন মাথার একটি চুলও পাকে নি। তবে সামান্য একটু কুঁজো’হয়ে পডেচে। গলায় তুলসীর ত্রিকষ্ঠ মালা বাধক্যের একমাত্র স্বম্পষ্ট চিহ্ন । —কতদিন চাকরি হোলো গৌর-কাক ? —তা, একত্রিশ-বত্রিশ বছর। —রোজ ক-খানা গা-বেডাতে হয় ? —পাঁচ-ছখানা গায়ে বিট থাকে রোজ। পাঁচ-ছ কোশ হাটতে হয় দৈনিক । জলে কাদায় হানিভাঙা, দুগ গোপুর, সরভৈাগ, দেকাটি এসব জাযগায় যেতে বড্ড কষ্ট । প। হেজে যায়, পাকুই হয় । কতদিন পরে ওকে ডাক বিলি করতে দেখে এমন এক আনন্দ হোলো । এতদিন পরে দেশে এলাম, বাইরের জগতে কত পরিবর্তন ঘটে গেল, আমার নিজের জীবনেও কত কি ওলট-পালট হোলো—কিন্তু সেই পুরাতন গ্রামে ফিরে এসে দেখি, সময় এখানে আচঞ্চল। বঁশ আম বনের ছায়ায় ছায়ায় পুরাতন জীবন সেইরকমই বয়ে চলেচে–গোঁর পিওন সেই পুরনো দিনের মতই চিঠি বিলি কৱচে ! গোঁর পিওন রোজ আসে, রোজ খানিকট বসে গল্প করে । কোনোদিন একটা নারকোল, কোনোদিন বা একটা কঁঠাল চেয়ে নিয়ে যায় । মাস আট-নয় সেবায় বড় আনন্দেই কেটেছিল গ্রামে । তারপরই আবার চলে যেতে হোলো বিদেশে । কাটলে সেখানে কয়েক বছর। এইবার আষাঢ় মাসে দেশে ফিরে এলাম আবার । P এসে দেখি, বাড়ীর কি ছিরিই হয়েছে । না থাকলে যা হয়। কয়েক বছরের বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে আগাছার জঙ্গল বাড়ীর ছাদ পর্যন্ত নিবিড় ঝোপের স্বষ্টি করেচে। সিমেন্ট উঠে গিয়ে রোয়াকে কাটানটের জঙ্গল গজিয়েচে । ঘরের মধ্যে কডিকাঠে মৌমাছিরা চাক বেঁধেচে। কলীবদ্ধদু-কডিতে বরগাতে খুলচে। চামচিকের নাদি দুইঞ্চি পুরু হয়ে জমেচে মেঝের ওপর ।