পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরফোলজি

নির্মলার সঙ্গে মেডিকেল কলেজে যেদিন ঢুকি সেদিনই প্রথম দেখা । আমি আই-এসসি পাশ করে মেডিকেল কলেজে ঢুকেচি, বয়েস উনিশ । চোখে প্রথম যৌবনের রঙীন নেশাটেশা একেবারেই ছিল না বললে ভুল বলা হবে, যতই কেন অধ্যয়নপরায়ণ ভালো ছেলে হই না কেন । সেই নেশার ঘোরেই বোধহয় নির্মলাকে স্বর্গের দেবী বলে মনে হোল প্রথম দর্শনেই। ছিপছিপে সুন্দর মেয়ে, টানা-টানা চোখ, জোড়া ভুকু, দিব্যি দেখতে মুখখানি । নীল রংয়ের শাড়ী পরণে, গায়ে ফুল-হাত ব্লাউজ, সরু চুডি ক-গাছা হাতে। চোখে মুখে একটা দীপ্ত বুদ্ধির ছাপ। নারীমুলভ লজ্জা তার মধ্যে মোটেই নেই। আছে বিদ্রোহিনীর উগ্র চ্যালেঞ্জ । আমার মনে হোত ওর সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি পুরুষজাতকে চ্যালেঞ্চ করচে যে, আমার সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা করতে এসে না, আমি সে ধরনের মেয়ে নই। খবরদার ! g সেইজন্যেই যত দিন যেতে লাগলে তত আমি ওর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে লাগলাম । তখন জানি নে, যে, আমার জীবনটা একেবারে মাটি করে দেবার জন্যে ও এসেচে । কার জন্যে আজ আমি এই পঁয়তাল্লিশ বছরের প্রৌঢ়তায় পদার্পণ করেও অকৃতদার, সন্তানসন্ততিহীন, ছন্নছাড, লক্ষ্মীছাড়া মানুষ ? কার জন্যে সারা জীবন তৃপ্তি পেলুম না, মুখ পেলুম ন, আপনার বলতে কাউকে পেলুম না, টাকা রোজকার করতে হয় করে যাচ্চি, খেতে হয় খেয়ে যাচ্চি, কলেজে অধ্যাপনা করতে হয়, করে যাচ্চি, জীবনের না আছে কোনো উদ্বেত, না আছে কোনো অবলম্বন । শুনেছি অনেকের এরকম হয়, প্রেমের নেয়ায় পড়ে অল্প বয়সে, সে নেশ কাটিয়েও ওঠে। কিন্তু আমার মত এমন উচ্ছন্ন যায় কে ? যাক সে সব কথা । কেমন করে কি হোল বলি । আমাদের ক্লাসে অনেকগুলি মেয়ে ছিল । কেউ বি-এসসি কেউ আই.এসসি পাস করে এসে মেডিকেল কলেজের ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছিল। পাচটি মেয়েকে আমার আজও বেশ মনে আছে। একজনের নাম শকুন্তলা সেন, স্যামবর্ণ, দোহারা চেহারা, বড়-বড় চোখ ও মুখশ্ৰী মন্দ নয়—হাতের কজির কাছটা বডড মোট বলে মনে হোত। শকুন্তলা ছিল বড় শান্ত মেয়ে, কোনোদিকে চাইতে না, একমনে প্রোফেসরের বক্তৃতা শুনে নোট করে যেতো । একজনের নাম মুনীতি, তার উপাধি আমার মনে নেই, ওর রং ছিল খুব ফর্সা গোল চাদের মত মুখখান, ফ্লার্ট টাইপের মেয়ে, ক্লাসের ছেলেদের নাচিয়ে নিয়ে বেড়াতো। একটির নাম ছিল মহামায়া বন্দোপাধ্যায়—সেকেলে নাম কিন্তু বড় একেলে মেয়ে—ম্বন্দরী হিসেবে মন্দ নয়, অতি চমৎকার গঠন পারিপাট্য শরীরের, খুব শোঁখীন, চোখে চশম, কথায় কথায় হেলে