পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিভূতি-রচনাবলী আমার চোখে অতি পবিত্র । তার নামে কেউ কিছু বললে আমার সহ হয় না। এতো মেয়ে তে আছে কলেজে কিন্তু ওকে আমার অত ভাল লাগে কেন ? এর জবাব নেই। সেই নির্মলা আজ আমার সঙ্গে কথা বলচে ? নিজের থেকে ? নোট চেয়ে নিয়ে গেল ? কেন আমারই নোট নিয়ে গেল, কলেজে তো কত ছেলে রয়েচে ? ভালো ছেলে বলে নিয়ে থাকে যদি । মধুপ্রসাদ বা মাধোপ্রসাদ বলে একটি জৈন ছাত্র নাকি আমার চেয়ে ভালো—অবিপ্তি এটা শুনেচি আমি তাদের কাছে, যারা ক্লাসে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারলে খুশী হয় । যাই হোক সে রয়েছে তো ? আজ কি সুন্দর দিনটি আমার । কার মুখ দেখে না জানি উঠেছিলাম । পরদিন রবিবার নেশার ঘোরে সারাদিন কেটে গেল । আমার মনে সেই এক ভাবনা— নির্মলা আমার সঙ্গে ডেকে কথা বলেচে। ওর সঙ্গে আর দেখা হবে না। চলে যাবে বহুদূর বিদেশে। অনেকদিন পরে ফিরে আসবো । ওকে দেখিয়ে দেবে। আমি কত বড় ত্যাগী । হঠাৎ আমার দেখে ও অবাক হয়ে যাবে। এ সব সঙ্কল্প অবশ্য সঙ্কল্পই থেকে গেল ! সোমবার ক্লাসে আবার ওর সঙ্গে দেখা হোল । সহজভাবেই ও আমার খাত ফেরত দিলে এবং আমিও সহজভাবে নিলুম। এর পরে মাঝে মাঝে ও আমার কাছ থেকে খাতা নিয়ে যায়। আবার ফেরত দেয় দু-তিন দিন পরে। আমি ভাবি ওকে একদিন নির্জনে দেখা করতে বলবো। কিন্তু খাত ফেরত নেবার সময় মুখ শুকিয়ে যায়, বুক টিপ চিপ করে, কোনো কথাই মুখ দিয়ে বেরোয় না। কোনো একটি কথাও বেরোয় না। সহজভাবে আমি ওর সঙ্গে ব্যবহার করতে পারি নে দেখলুম। সহজভাবে চলতে চেষ্টা করি, বাইরে দেখাই সম্পূর্ণ সহজভাবেই চলচে–কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ানক আড়ষ্ট ও মুখচোরা হয়ে যাই। জিভ শুকিয়ে আসে কেন কে বলবে? বুকের চিপ টিপ শব্দ যেন ও শুনতে পাবে মনে হয়। কিসের একটা ঢেউ গলা পর্যন্ত পৌঁছে গলার স্বর আটকে দেয় । 魏 গোর্ট ফাস্ট ইয়ার এভাবে কেটে গেল । অন্য কোনো মেয়ের দিকে আমার মন নেই, তাদের মধ্যে অনেকে কথা বলে আমার সঙ্গে । অত্যন্ত সহজভাবে তাদের সঙ্গে মিশি । দু-একজনকে চা-ও খাওয়াই কলেজের মধ্যে ও বাইরে । কিন্তু নির্মলার বেলা সব গোলমাল হয়ে যায় । m কিন্তু এসব তো সাধারণ কথা । আসল ব্যাপার হচ্চে আমার প্রতিদিনের ভীষণ বেদন ও মনোকষ্ট। সে যন্ত্রণ দিন দিন আমার বাড়চে । ভেতরে-ভেতরে শুকিয়ে যাচ্চি । অথচ কাউকে বলতে পারি নে সে দারুণ যন্ত্রণ। সকাল থেকে সাগ্রহে প্রতীক্ষা করি সে সময়টির, যখন আবার ওর সঙ্গে আমার দেখা হবে । o,