পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ፀ¢ এমন সময়ে পুষ্প হাসতে হাসতে পাশে বসে বল্লে--কেমন জ্যোৎস্না হয়েচে দেখ ; মনে পড়ে তুমি আর আমি কেওটার বুড়োশিবতলার ঘাটে এমনি জ্যোৎস্বারাতে কত বসে ইলিশমাছ ধরা দেখতাম ? --কিন্তু জ্যোৎস্ন উঠলো কোথা থেকে ? চাদ এল কি করে ? —তৈরী করলুম জ্যোৎস্নাটা । ভাবলুম তোমার সঙ্গে একদিন জ্যোৎস্বারাত্রে ঘাটে বসা যাক । কেমন, বেশ হয় নি ? —আচ্ছা পুপ, যে কোনো ঋতু, যে কোনো সময়কে তৈরী করতে পারো ? এ তে অদ্ভুত ! —সময় এখানে মনের দ্বারা স্বষ্টি করা যায়, যেমন অন্য সব জনিস করা যায়। সে তো তুমি চোখের ওপর দুবেলা দেখচে । আচ্ছা যতুদ, সাগয় কেওটার কথা মনে পড়ে ? —খুব পড়ে পুপ । সেই একবার আমি গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিলাম, মনে আছে ? তোর কি কান্না ! সত্যি আমি এক একবার ভাবি জীবনে কি পুণ্য ন জানি করেছিলুম যে তোর মত মেয়ের সঙ্গ পেয়ে ধন্য হয়েছি। আমার এখনও মনে হয় এ সব স্বপ্নষ্ট বা । পুষ্প লজ্জিত স্বরে বল্লে--আহা ! পুষ্প বুঝতে পারে যে, যতীন আশার কথা ভাবচে, ঘাটে এসে বসেই তার কথা ওর মনে হয়েছে। যত উচ্চ স্তরের আত্মাই হোক, পুষ্প মেয়েমানুষ, তার মনটা হু হু করে ওঠে । যতুদাকে সে আবাল্য ভালবালে, প্রাণ দিয়ে ভালবাসে কিন্তু যতুদ তার চেয়ে যে আশাবোঁদিকে বেশী ভালবাসে, একথা সে জেনেও মনে স্থান দেয় না বেশীক্ষণ । উপায় কি ? এই তার অদৃষ্টলিপি, নইলে সে ছেলেবেলায় পৃথিবী ছেড়ে, যতুদাকে ছেড়ে আসবে কেন ? যতীনের গত তেরে বছরের জীবনে পুষ্প ছিল না, ছিল আশ–এ অবস্থায় আশার সঙ্গেই যতীনের মনের যোগ অনেক গাঢ়বদ্ধ । কারো কোনো দোষ নেই"] , পুষ্পের মনে দুঃখের ছায় এসে পড়তেই বাইরের জ্যোৎস্না ক্রমশ স্নান হয়ে এল। মন প্রফুল্ল না থাকলে মানসিক স্থষ্টি ক্ষুণ্ণ হবেই। হঠাং পুষ্প যতীনের দিকে চেয়ে বলে—একটা কথা ভুলে গিয়েছিলুম যতুদা। আজ কল্পপর্বতের গান বাজবার দন। চল তোমাকে শুনিয়ে আনি । সে এক অদ্ভূত জনিস । ওদের স্বর্গ থেকে বেরিয়ে ওরা শূন্ত বেয়ে চললো। বহুদূরে একটা সবুজ নক্ষত্রের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে পুপ বল্লে-ওইখানে আমাদের যেতে হবে । ওই দিকে একদৃষ্টি চোখ রেখে ভাবে যে আমরা ওখানে যাবো । নক্ষত্রটা যেন ক্রমে বড় হচ্চে, যুতীনের মনে হোল সে সবেগে ওর দিকে নীত হচ্চে। কি অদ্ভুত এ যাত্র । যতীন অবাক হয়ে চেয়ে দেখছিল অনেক দূরে অন্ধকারের মধ্যে একটা প্রকাও গ্রহ ডুবে ডুবে ঘুরচে । পুপ বল্পে - এই হচ্চে শুক্রগ্রহ–সন্ধ্যাবেল সেটাকে পশ্চিম আকাশে দেখা যায় । আকাশের রং এখানে নীল নয়, অনেকটা ধুসরমিশ্রিত বেগুনী। শূন্তপথে অনেক আত্মা তাদের মতই যাওয়া আসা করচে, তবে তাদের মধ্যে কেউই উচ্চশ্রেণীর নয়, ওদের রং দেখে