পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ףט —র্তারা ইচ্ছে না করলে এ স্তরের আত্মাকে তুমি সহজে দেখতে পাবে না যতুঙ্গা । কল্পপৰ্বতের কাছে যাকে আমরা চুম্বকশক্তির ঢেউ বলি-ত অত্যন্ত প্রবল। সেখানে গেলে তোমার দেহ শক্তিমান হবে, তখন খুব উচ্চ স্তরের আত্মাকেও অনুক্ষণের জন্তে–মানে মাত্র যতক্ষণ সেই পর্বতের কাছে থাকবে ততক্ষণের জন্যে—দেখতে পাবে। অল্প পরেই একটা অনুচ্চ পর্বত সামনে দেখা গেল, তার ওপরটা অনেকখানি সমতল । সেই সমতল জমিটুকুর ওপর যে দৃশ্য চোখে পড়ল যতীনের, তাতে সে বিস্মিত, মুগ্ধ ও স্তম্ভিত হয়ে গেল । সেখানে বহু দেবদেবী একত্র হয়েছেন। তাদের অঙ্গের জ্যোতি ও রূপে সমস্ত ভূমিত্র আলোকিত হয়ে উঠেচে, সমগ্র বায়ুমণ্ডল ( যদি এখানে বায়ুমণ্ডল বলে কোনো কিছু থাকে ) তাদের দেহনিঃস্থত উচ্চ বৈদ্যুতিক শক্তির স্পন্দনে মৃত্যুঞ্জয় অমৃতের নিঝ র হয়ে উঠেচে সেন, দেহগন্ধের স্বরভিতে বহুদূর পর্যন্ত আমোদিত । যতীন এ পর্যন্ত এত উচ্চ জীবের এ চত্র সমাবেশ কখনো দেখেনি। সে চুপি চুপি বল্লে— এ যে ওঁদের দস্তুরমত ভিড় লেগে গিয়েচে দেখচি, পুষ্প ! উঃ - সবাই যেন কিসের অপেক্ষা করচে। সকলের চোখ বা দিকের একট। খুব উচু পাহাড়ের দিকে নিবদ্ধ। যতীন বল্লে-ও পুপ, এ যেন ফোর্টের প্ল্যামপার্টে দাড়িয়ে মোহনবাগানের ম্যাচ দেখতে এসেচে সব—আহাঁ, টিকিট কিনতে পায়নি বেচারীরা ! পুপ তিরস্কারের স্বরে বল্লে—না, তুমি জালালে যতুদা—চুপ করে থাকো না কেন ছাই । যতীন কি বলতে গিয়ে হঠাৎ চুপ করে গেল । বঁ৷ ধারের সেই পাহাড়ের চুড়া থেকে এক অপূর্ব মধুর, শব্দের ঢেউ উখিত হোল । দেবদেবীরা সকলে অবনত মস্তকে শুনতে লাগলেন" - কেউ কেউ পাহাড়ের ঢালুর রঙান স্বয়ম্প্রভ তৃণদলে শুয়ে পড়লেন অলসভাবে । কেউ বসে দুহাতে মুখ ঢাকলেন । বেশীর ভাগই কিন্তু দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনতে লাগলেন । সে মধুর শব কণ্ঠসঙ্গীত নয়, যন্ত্রসঙ্গীতের মত শব্দটা । কিন্তু পরিচিত কোনো যন্ত্রে বাদিত সঙ্গীত নয়। অত্যন্ত রহস্যময় তার উৎপত্তিস্থল ৷ যেন গঙ্গার ধারা,—কোন উচ্চ পর্বতের তুষারপ্রবাহে তার জন্ম, কেউ খবর রাখে না । যতীনের সর্বাঙ্গ বার বার শিউরে উঠতে লাগলো । @ শুনতে শুনতে যতীনের মনে হোল সে আর"পৃথিবীতে বদ্ধ আত্মা নয়—সে উচ্চ অমৃতের অধিকারী দেবতা হয়ে গিয়েচে, সে মুক্ত, সে বিরাট—তার আত্মা সারা বিশ্বকে বোপে সচেতন হতে চায়, তার বিরাট হৃদয়ে সকল পাপী তাপী, মৃৰ্থ ও নিন্দুকের স্থান আছে, পতিতের উদ্ধার করতে যুগে যুগে পৃথিবীতে জন্মেচে, তাদের দুঃখে যুগে যুগে করেচে মৃত্যুবরণ । বিশ্বের মহাদেবতার প্রেমিক পাশ্বচর সে–সে নৃত্যশীল গ্রহনক্ষত্রের বিচিত্র নৃত্যচ্ছন্দে লীলাময়, পবিত্র, প্রেমিক, মুক্ত দেবতা। এ কি আনন্দ ! এ কি শিল্পমাধুর্য। এ কি অভিনব অনন্তৰ্ভূতপূর্ব অমরত! কোনো দিকে কেউ আর দাড়িয়ে নেই. সবাই বলে পড়েচে.নিস্তব্ধ চারিদিক “মধুর