পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२ বিভূতি-রচনাবলী দাড়িয়ে কি করছিলেন । মেয়েটি বল্লেন-ইনি ডাক্তার আমেণ্ডে । রাশিয়ার কৃষকদের জন্যে ইনি সারা জীবন •খেটেচেল পৃথিবীতে থাকতে । গবর্ণমেণ্টের কুদৃষ্টিতে পড়ে লওনে পালিয়ে গিয়েছিলেন মহাযুদ্ধের পূর্বে । সোভিয়েট গবর্ণমেণ্টের সময়েও ফিরে এসে অনেক দুর্দশা ভোগ করেচেন। স্ট্যালিনের সুনজরে বড় একটা ছিলেন না । এর জীবনের একমাত্র কণম্য হচ্চে গরীব ও দুঃখী লোকের দুঃখ দূর করা । সোভিয়েট গবর্ণমেণ্টের অনেক জিনিস ইনি স্বদ্যুষ্টিতে দেখতেন না, তারাও একে সুনজরে দেখতে না । আজ মাত্ৰ পাচ বছর হোল আত্মিক লোকে এসেচেল; তাও সেই গরীবদেরই কাজে প্রাণ দিয়ে । আমাশা রোগে আক্রান্ত পল্লীতে ডাক্তারি করতে গিয়ে নিজে সংক্রামক আমাশ। রোগেই প্রাণ হারান । এত বড় নি:স্বার্থ দয়ালু আত্মা এ যুগে খুব কমই জন্মেচে । মরণের পরে এ লোকে এসেও সেই রাশিয়ার গরীব লোকদের নিয়েই থাকেন । যেখানে দুভিক্ষ, যেখানে রোগ-শোক সেখানেই ছুটে আসচেন । চতুর্থ স্তরের আত্মা, কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে যেতে চান না কোথাও । ডাক্তার আমেণ্ডে এদের সামনে এসে হাসিমুখে দাড়ালেন । বল্লেন—আপনারা ভারতবর্ষের লোক ছিলেন না ? দেখলেই বোঝা যায় । এর ভগবানকে খেদিয়ে দিচ্চে দেশ থেকে, ষেন ইটপাথরের তৈরী গির্জা ডাঙলষ্ট ভগবানকে তাড়ানো যায় ! রাশিয়াতে উচ্চ শ্রেণীর ভারতীয় মুক্তাত্মা যদি দয়া করে আসেন, তবে কিছু কাজ করা যায়। মেয়েটি বল্লেন সে দু-একজনের কাজ নয়, ডাক্তার। অনেক আত্মার সমবেত চেষ্টার ফলে যদি চিস্তার চৌম্বক ঢেউ এর স্বষ্টি করা যায়- খুব শক্তিশালী ঢেউ, তবে হয়তো কিছু হতে পারে । তোমার আমার দ্বারা তা হবে না । ডাক্তার আমেণ্ডে বল্লেন -আর একটা বু্যাপার । পুথিবীতে এসে এখন দেখ,চ আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়ি । দ্বিতীয় তৃতীয় স্তরের আত্মার সাহায্য ন নিয়ে কিছু করতে পারিনে । জনকতক দ্বিতীয় স্তরের লোক আমরা যোগাড় করে এনেচি কিন্তু ওরা মন দিয়ে কাজ করছে না । পুষ্প বল্লে—আমাদের দুজনকে নিন দয়া করে আপনার দলে । আমাদের দিয়ে যা সাহায্য হয় পাবেন। একটা কথা, আমাদের ভারতবর্যেও ভিক্ষে আর বন্যায় বড় কষ্ট পায় লোকে । সেখানকার জন্যেও আপনার সাহায্য করবেন—তারা বড় দুঃখী । ডা: আমেণ্ডে বল্লেন-—সে আপনি ভাববেন না।, যেখানেই লোকে দুঃখ পাচ্চে, সেখানেই আমরা থাকবো। দেশ, জাতি, ধর্মের গণ্ডি নেই আমাদের কাছে। সারা পৃথিবী আমাদের দেশ। তবে কি জানেন, এই রাশিয়া আমাদের জন্মভূমি। এখানকার লোকের দুঃখ আমাদের প্রাণকে বড় স্পর্শ করে । ভারতবর্ষেও যখন যেতে বলবেন, তখনই আমরা যাবো। আমাদের দলে অনেক লোক আছেন—সবাইকে নিয়ে যাবো । যতীন বল্লে—আরও উচ্চস্তরের কোনো লোক আসেন না কেন ? পঞ্চম বা ষষ্ঠ কি তারও ওপরের স্তরের কাউকে তো দেখতে পাইনে ।