পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান $36. যতীন ছাড়তে না তর্ক করতে, এমন সময়ে পুজো শেষ করে পুষ্প ফিরে এল । দেবী ওদের দুজনকে নিয়ে পৃথিবীতে এলেন । যে জায়গাটিতে তারা এলেন, সেখানটা একটা নির্জন স্থানু। ছোট একটা নদী, তার ধারে অনেকদূরব্যাপী ঘন জঙ্গল । যতীন বল্লে—এটা কোন দেশ ? দেবী বল্লেন—বাংলাদেশ, চিনতে পারচ না কেন ? মধুমতী নদী, এইখানে ছিল বড় গল্প নকীবপুর, রাজা সীতারাম রায়ের আমলে । ধ্বংস হয়ে জঙ্গল হয়ে রয়েচে । বাংলাদেশ ছাড়া তোমাদের আনতাম না-কারণ যে কাজ করতে হবে তাতে বাঙলা ভাষা বলা দরকার হবে। চল দেখাচ্চি । 曼 নদীর ধারে জঙ্গলের মধ্যে এক জায়গায় ছোট একখানা খড়ের বাড়ী । কিন্তু বাড়ীখানা দেখেই যতীন অবাকৃ হয়ে গেল। ঘরখানা পৃথিবীর বস্তু দিয়ে তৈরী নয়। আত্মিকলোকের চিন্তাশক্তিতে স্বঃ আত্মিকলোকের সূক্ষ্ম পদার্থে তৈরী ঘর। পৃথিবীতে এমন ঘর কি করে এল, যতীন জিজ্ঞাসা করতে যাচ্চে -এমন সময় একটি বৃদ্ধ এক বোঝা কঞ্চি বয়ে নিয়ে ঘরের সামনে এসে দাড়ালো । যতীন আরও অবাকৃ হয়ে গেল । বৃদ্ধটি পার্থিব স্থল দেহধারী মানুষ নয়-—খুব নিম্নস্তরের আত্মা—পৃথিবীতে যাকে বলে প্রেত ! তার হাতের কঞ্চির বোঝাও সত্যিকার কঞ্চির বোঝা নয়, সেটা চিন্তাশক্তিতে গড়, আত্মিকলোকের বস্তু দিয়ে তৈরী । বৃদ্ধের ভাব দেখে মনে হোল সে তাদের কাউকে দেখতে পায়নি । যতীন বিস্মিতভাবে বল্লে—ব্যাপার কি? এ তে মানুষ নয়। এখানে এ ভাবে কি কবৃচে ? করুণাদেবী বল্লেন—সেই কথা বলবো বলেই তোমাদের আজ এনেচি। বড় করুণ ইতিহাস লোকটির। ওর নাম দীক্ষ্ম পাড়ই । স্ত্রীকে সন্দেহ হয় বলে খুন করে নিরুদেশ হয়—দেশ থেকে পালিয়ে পুলিশের ভয়ে নাম ভাড়িয়ে নকীবপুরের এই জঙ্গলে অনেক দিন ঘর বেঁধে ছিল । আট দশ বছর পরে ওর নিমোনিয়া হয়, তাতেই মারা পড়ে। মৃত্যুর পরে হয়ে গিয়েচে আজ ত্রিশ বছর । এই ত্রিশ বছরেও ও বুঝতে পারেনি যে ও মরে গিয়েচে । ভাবে, ওর কি অমুখ করেচে, তাই ওকে কেউ দেখতে পায় না । জঙ্গলের মধ্যে খুব কমই লোক আসে, কাজেই জীবন্ত মানুষের সঙ্গে ওর পার্থক্য কি, বুঝবার স্বযোগ ঘটেনি। নিজেও পুলিশের ভয়ে জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। অথচ এত স্থল ধরনের মন, এত নিম্নস্তরের আত্ম। যে, আমি কতবার চেষ্টা করেও কিছু করতে পারিনি। আমাকে ও দেখতেও পায় না। শুরু নিজের লোক যারা মারা গিয়েচে, কখনো কেউ আসে না । তাই তোমাদের এনেচি তাজ । যতীন বল্লে—আশ্চর্য ! দেবী বল্পেন—মরে গিয়ে বুঝতে না পারা আত্মিক লোকের এক রকম রোগ। পুরোনো হয়ে গেলে এ রোগ সারানো বড় কঠিন, কারণ মৃত্যুর প্রকৃত স্বরূপ কখনো না জানার দরুন এই