পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ● ፃ পশ্চিমাকাশে অস্তহুর্যের রাঙা আভা । গঙ্গার বুকে পাল তুলে ছোট বড় নৌকার দল চলেচে। দু-একটা মাছরাঙা পার্থী ছে৷ মেরে মাছ ধরচে ডাঙা থেকে অনতিদূরে । নৈহাটির গঙ্গা, কেওটা-সাগঞ্জের গঙ্গা । 廳 কতক্ষণ সে এরকম বসে ছিল জানে না, হঠাৎ সে চমকে উঠে দেখলে একজন জ্যোতির্ময় পুরুষ তার সামনে দাড়িয়ে । যতীন শশব্যস্তে উঠে তাকে প্রণাম করলে। আগন্তুক বলেন- বেশ করে রেখেচ হে তুমি ! পৃথিবী থেকে অল্পদিন এসেচ ? —আজ্ঞে ই ৷ –তাই দেখছি। হুগলী জেলায় বাড়ী ছিল ? তাই গঙ্গার ধার-টার ঠিক এই রক, করেচ । এ সব মায়া । জগৎ বা বিশ্বটাও তেমনি মায়া--সেই এক অখণ্ড সচ্চিদানন্দ ব্ৰহ্ম ছাড়া সব মায়া । কোনে কিছুর মধ্যে বাস্তবতা নেই । যতীন মনের মধ্যে তা বড়াতে লাগলে । এ ধরণের একটা মতের কথা সে শুনেছিল, একবার একটা বইএওঁ পড়েছিল যেন মনে এনে বল্লে--অদ্বৈতমত বলচেন ? মহাপুরুষ যেন একটু বিস্ময়ের ভাবে বল্লেন- অদ্বৈও বেদাস্ত সম্বন্ধে তুমি জানো ? তবে বই পড়লে কি হয় ? প্রত্যক্ষ অনুভূতি চাই। অখণ্ড সচ্চিদানন্দের অনুভূতি চাই । তুমি মরে এখানে এসেচ, কিন্তু জ্ঞান জন্মায়নি ভেতরে এথানে হুগলী জেলার গঙ্গার ঘাট তৈরী করে রেখেচ। এমনি করেচে অনেকেই এখানে। সব মায়া । আবার পৃথিবীতে জন্ম নিতে হবে গিয়ে—অদ্যবাদশতন্তেবা আজই হোক, দুশো বছর কি হাজার বছর পরেই হোক। অথও সচ্চিদানন্দের অন্তভূতি ভিন্ন মুক্তি নেই । যতীন ভয়ে ভয়ে বল্লে --- আজ্ঞে, মুক্তি মানে কি ? -- ভগবানের সঙ্গে একাত্মবোধ । যোগসাধনা ভিন্ন তা সম্ভব নয়। উপনিষদে দুটি পাখীর রূপক বর্ণনা আছে। একটি গাছের দুটি ডালে ওপরে নীচে দুটি পাখী বসে রয়েচে । নীচের পার্থীটা মিষ্ট ফল খাচ্চে, কটু ফল খাচ্চে, ওপরের পাখা নিবিকার অবস্থায় বসে আছে, স্থখদুঃখে উদাসীন, নিজ মহিমায় মগ্ন । একটি পরমাত্মা, অপর পাখাটি ইন্দিয়স্থখমগ্ন জীবাত্মা । নীচের পাখীটি যখন ওপরে উঠে ওপরের পাখীটির সঙ্গে মিশে এক হয়ে যাবে—তখনই তার মুক্তি । তদা বিদ্বান পুণ্যপাপে বিধু নিরঞ্জন পরমং সাম্যমুপৈতি— যতীন এমন কথা কখনো শোনেনি । বিস্ময়মুগ্ধের মত চেয়ে রইল সন্ন্যাসীর দিকে। সে ভেবেছিল মরণের পর যখন বেঁচে আছে, তখন তার আর ভাবনা কি ? কিন্তু এখন ওর মনে হোল কোথায় যেন কি গলদ রয়ে গিয়েচে । সে বিনীতভাবে বল্লে—আজ্ঞে তবে আমাদের উপায় ? আমাদের কে যোগ-শিক্ষা দেবে, কি হবে-শুনেচি সে বড় খটমট ব্যাপার-ওসব কি আমাদের জন্যে ? সন্ন্যাসী হেসে বল্লেন—খুব সোজা নয়, শক্তও নয়। আমি পৃথিবীতে তোমারই মত মানুষ ছিলাম। যৌবনে স্ত্রী-বিয়োগ হোল, সংসার মিথ্যা মনে হোল । তবুও পাচ বছর সংসারেই