পাতা:বিভূতি রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবযান ༤༽ ༤༽ আবহাওয়ায় । এ সব জায়গায় বেশিক্ষণ থাকা ওর পক্ষে ভালো না। চুম্বকের মত আকর্ষণ করে পৃথিবীর যত বাসনা কামনা আত্মিক লোকের জীবকে । টেনে এনে বেঁধে রাখবার চেষ্টা করে –ওপরে উঠতে দেয় না। অবিশ্যি যে বাসন কামনা বিসর্জন দিয়েচে, সে কামচর, স্বাধীন, মুক্ত। শত পৃথিবী তাকে বাধতে পারে না। কিন্তু যতীনের মত আত্মার পক্ষে এমন ঘন ঘন যাতায়াত বড় বিপজ্জনক । পুষ্প কিছু বলবার আগেই যতীন আবার বল্লে—আমার বড় ইচ্ছে, করুণাদেবীকে আর একবার আশার বিষয় বলি । তোমার কি মত ? —যতীনদী, তাতে ফল হবে না । আশা বৌদির কর্ম ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্চে । কেউ কিছু করতে পারবে না। নইলে চেষ্টা তুমি আমি কম করি নি। ওর মন ওকে টানচে নিচের দিকে—অধঃপতনের পথে । বাধা দেবার সাধ্য কার! এক যদি ভগবান সাহায্য করেন, রুপা করেন— কথাটা যতীনের মনঃপূত হোল না। সে বল্লে--ভগবান সাহায্য করলে এই অবস্থায় এপে ও দাডায় আজ ? তিনি চোখ বুজে আছেন । পুপ বল্লে—তুলে যাচ্চ যতীনদ, ভগবান তাকেই সাহায্য করেন, যে অকপটে সং হবার চেষ্টা করচে, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। যেচে তিনি সাহায্য করতে গেলে তাতে কোনো ফল হবে না বলেই তার কাছ থেকে সাহায্য আসে না । —কেন ? —যে ভগবানকে চেনে না, তাকে স্বীকার করে না, তার হোল আচ্ছাদিত চেতন । তার চেয়ে যে ভালো, তাকে বলে সঙ্কুচিত চেতন । এই দুই ধরনের লোককে ভগবৎকথ। শোনালে উণ্টে উৎপত্তি হয়। আশা বৌদির আচ্ছাদিত চেতন । আলো জাললে কি হবে ? চাকনির মধ্যে আলো সেঁধোবে না । এদের ওপরে মুকুলিত চেতন, তাদের মনে ভগবানের জ্ঞান জাগতে শুরু করেচে। তারও ওপরে বিকচিত চেতন, সবার ওপরে পূর্ণ বিকচিত চেতন-যেমন বড় বড় ভক্ত কি সাধকের । কত নিচে পড়ে আছে আশা বৌদি আর নেত্যর দল ভাবো । যতীন কৌতুকের স্বরে বল্লে—ও বাবা, তোমার পেটে এত ! নবদ্বীপের ভট্টচাৰ্য্যদের মত শাস্তর কথা শুরু করলে যে তোমার কী চেতন পুষ্প, বিকচিত না পূর্ণ বিকচিত ? আর আমিও বোধহয় আচ্ছাদিত চেতন—না, কি বলে ? পুষ্প খিলখিল করে হেসে বল্লে—আলুবৎ । নইলে তুমি কি ভাবে তুমি খুব উন্নতি করেচ ? —না, তাই জেনে নিচ্চি তোমার কাছে । —জেনে নিতে হবে কেন,-নিজে বুঝতে পারচো না, না ? কথনো ভগবানকে ডেকেচ ? তার দিকে মন দিয়েচ জীবনে ? তাকে বোঝবার চেষ্ট তো দূরের কথা। আমার কথা বাদ দাও যতীনদী, আমি তুচ্ছাদপি তুচ্ছ, কিন্তু বড় বড় বিস্বান, জ্ঞানী, গুণী লোকের মধ্যেও অনেকে মুকুলিত চেতনও নয়। পূর্ণ বিকচিত তো ছেড়ে দাও, বিকচিত চেতনই বা ক’জন ? পৃথিবীতে বা এই লোকে কোথাও জিনিসটা পথেঘাটে মেলে না। তবে নেই তা নয়, আছে ।