পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

lo/* রাশি, ওই কয়লাকাঠের গাদা, আলু-বেগুনের চুবড়িটা—এই সংসার ? এই জীবন ? ইহাই কি চিরকাল দেখিবেন ও জানিবেন ?” অর্থাৎ সংসার, স্ত্রী ব্যবসা—সব কিছুই তার কাছে পুরনো ও বিস্বাদ মনে হয়। এতদিনের অভ্যস্ত জীবনটার প্রতি জাগে বিতৃষ্ণা ! বন্ধুর সঙ্গে ফিল্ম-স্টুডিওতে ঘোরাঘুরি ও নান স্টারদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হওয়াতে তাদের সকলকেই গঙ্গাধরের ভালো লাগে। মনে হয়—“তারা যেন অন্য লোকের জীব ! গান আর স্বর দিয়া তৈরী ! জীবনের কতখানি কাটিয়া গেল...পৃথিবীতে এমন রূপ রস গন্ধ · তার কোন পরিচয় তিনি পাইলেন না ...এখনো এখনো যদি তিনি পান ।” রেখা কৃশাঙ্গী মেয়ে। নাচের উপযুক্ত দেহের গড়ন। জোৎস্নারাত্রে স্টুডিওর বাগানবাড়ীতে সেই নৃত্যরত তরুণীর বিভিন্ন লাস্তাভঙ্গি দেখে গদাধর ভাবেন—“টাকা সার্থক হয়, এই ব্যবসায়ে খরচ করেও মুখ, লাভ যদি পাই তাতেও স্বখ ! যে বয়সের যা--"আমার বয়স তো চলে যায়নি ৷” এখানেও গদাধরের সেই ব্যবসায়ী মনেরই পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যবসাই করবে, কিন্তু সে পুরনো ব্যবসা নয়। পাটের আড়তদারীতে তার অরুচি ধরে গেছে। তাই এই নতুন ব্যবসা, ফিল্ম-স্ট,ডিও ভাড়া নিয়ে নিজস্ব ছবি তৈরী করবে, স্থির করে ফেলে। এ ব্যবসায়ে টাকা নিয়োগ করে কারা কি রকম ধনী হয়েছে, সে-সব কাহিনী বন্ধুর মুখে বারংবার শুনেছিল বলেই যে এই ব্যবসায়ে এত আগ্রহী হয়ে উঠেছিল, একথা বললে সত্যের অপলাপ করা হবে। ব্যবসায়ে লাভ-লোকসান আছেই, একথা তার মত অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীর কাছে অজানা ছিল না। তাই লাভ-লোকসানের কথা হিসাব করতে গিয়ে সর্বপ্রথম তার মনে হয়েছে, এ ব্যবসায়ে খরচ করেও মুখ ! টাকা সার্থক ! সঙ্গে সঙ্গে তার মনের মধ্যে রূপ-রস-গন্ধে-ভরা সেই নতুন জগতের স্বাদ গ্রহণের বাসনা তীব্র হয়ে উঠেছে। নইলে শুধুমাত্র যে ব্যবসাদার, তার মনে বয়সের কথাটা জাগবে কেন ? ব্যবসার সঙ্গে বরসের সম্পর্ক কি ? বিশেষ করে গদাধরের বয়স যখন চল্লিশ—সে প্রৌঢ়, কর্মক্ষম ! অর্থাৎ রূপ-রস-গন্ধ-ভরা ছায়ালোকের সেই সব তরুণী, হাস্তলাস্যময়ী উর্বশী-মেনকার দল, সঙ্গীত-নৃত্য-পটীয়সী—যাদের দেখে তার মন ভেতরে ভেতরে লোভাতুর হয়ে উঠেছে, তাদের উপভোগ করার যে প্রকৃত বয়স, সেই জাগ্রত যৌবন আজ কেবল অতিক্রাস্ত নয়, প্রৌড়ত্বের ও শেষ সীমায় এসে পৌচেছে—তাই অজ্ঞাতে বার বার সেই বয়সের কথাটাই উকি দেয় গদাধরের মনে । অনঙ্গ কুলবধূ, আদর্শ স্ত্রী। তার কাছে সব কিছু পেয়েও তাই এই অভিনেত্রীর বাইরের চাকচিক্য চোখ-ঝলসানো বেশভূষা মৃত্যগীত দেখে মনে হয়েছে, এটাই নারীর আসল সম্পদ—এটা থেকে সে বঞ্চিত হয়েছে, সে ঠকেছে এতদিন । আসলে নারীকে দুই রূপেই পেতে চায় পুরুষ। নারীকে দুই রূপে কামনা করা—এ গনাতম। বাংলা সাহিত্যেও এ প্রশ্ন বার বার উঠেছে। বিষবৃক্ষ থেকে শুরু। এককে পেয়ে