পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जटैथ छल ጏቂፃ ঘুমিয়ে ৰেশ ছিলাম। ঘুম ভাঙলেই যেন পাষাণ ভার চাপলে বুকে। সারানি এ পাষাণের বোঝা বুক থেকে কেউ নামাতে পারবে না। : এই রকম বিভ্রান্ডের মত যে ক'টা দিন কাটলো তার হিসেব রাখিনি। দিন আসে যায়, রাত্রে ঘুমুই, আর কিছু মনে থাকে না। এক ঘরে শুয়ে কান্না আসে। বুক-ভাঙা কান্না । দিনমানে পাগলের মত ঘুরে বেড়িয়ে ভুলে থাকি। কিন্তু রাত্রে একেবারে কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হতে হয় শূন্ত ঘরে। আশ্চর্য্যের কথা একটা । পান্না টাকাকড়ি একটাও নিয়ে যায় নি। আমার বালিসের তলায় রেখে দিয়েছে । বোধ হয় তাড়াতাড়িতে ভুলে গিয়েচে । এই খবর পাবা জন্যে মরে যাচ্চি । কে দেবে এ সংবাদ ? এ কদিন বসে বসে ভাবলুম। কি আশ্চৰ্য্য আমার মনের এই তীব্র, তীক্ষ, উগ্র, অতি ব্যগ্র মনোভাব ! এমন মন আমার মধ্যে ছিল তা কখনো আমি জানতে পারি নি। এ মন কোথায় এতদিন ঘুমিয়ে ছিল আমারই মধ্যে, স্বরবালা এ ঘুম ভাঙাতে পারে নি—ভাঙিয়েচে পান্নার সোনার কাঠি। এ মন আমাকে একদণ্ড স্বস্থির থাকতে দেয় না । সৰ্ব্বদা পায়ার কথা ভাবায়। সব সময়, প্রতিটি মুহূৰ্ত্তে যে যাকে ভালবাসে, সে তার কথা ছাড়া ভাবতে পারে না। ভাববার সামর্থ্য তার থাকে না। আগে বুঝতাম না এ সব কথা। এ অদ্ভূত অভিজ্ঞতা, মন নিয়ে এ কারবার তখন আমার ছিল না। দিন রাত, চন্দ্র সূর্য, সকাল বিকেল, ইহকাল-পরকাল ভালমন্দ—সব গিয়ে সেই এক বিন্দুতে মিশচে–পান্না। ধারা ঈশ্বরের ভক্ত, তাদের নাকি এমন দশা হয় শুনেচি। ঈশ্বরের বিষয় ছাড়া ভাবতে পারেন না, ঈশ্বরের কথা ছাড়া কইতে পারেন না। ঈশ্বরের বিরহে চৈতন্যদেব নাকি বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়ে যেতেন। বিরহের এ অনুভূতি ভগবান যাকে আস্বাদ করান, সে ভিন্ন করতে পারে না - বিশেষ অবস্থায় পড়তে হয় । স্বরবালা বাপের বাড়ী গেলে সে রিরহদশ আসে না। একেবারে হারিয়েচি, এই ভাব আসা চাই। স্বরবালা তো কত বার বাপের বাড়ী গিয়েছে, এ দশা কি হয়েচে আমার জীবনে কখনো ? তাই বলছিলাম, এখন বুঝছি ঈশ্বরভক্তদের যে তীব্র প্রেমের কথা শুনেচি বা পড়েচি—তা কবি-কল্পনা বা অতিরঞ্জিত নয়, অক্ষরে অক্ষরে সত্যি । আমার চেয়ে হয় তো আরো বেশি সত্য । মনের ব্যাপারই। মনের ঠিক অবস্থায় না পড়লে কিছুতেই অন্তের মনের সেই অবস্থা সম্বন্ধে কোনো ধারণ করা যায় না। এখন হাড়ে হাড়ে বুঝচি যা, আগে এই সব কথা বললে বিশ্বাস করতাম না। বিশ্বাস হত না। এসব জিনিস অল্পমানের ব্যাপার নয়, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ব্যাপার। আগে থেকে বললে কে বিশ্বাস করবে ? পোড় খাওয়া না হোলে পোড়ার জালা কে ধারণা করবে ? সাধ্য কি ?