পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চুয়াডাঙ্গ যাইবার বড় রাস্তার দু’পাশে দুইখানি গ্রাম--দক্ষিণ-পাড়া ও উত্তর-পাড়া। দক্ষিণ-পাড়ায় মাত্র সাত-আট ঘর ব্রাহ্মণের বাস, আর বনিয়াদী কায়স্থ বন্ধ-পরিবার এ-গ্রামের জমিদার। উত্তর-পাড়ার বাসিন্দারা বিভিন্ন জাতির । ইহাদের জমিদারও কায়স্থ। উপাধি—বস্ব। উভয় ঘরই পরস্পরের জ্ঞাতি। বন্ধগণ গ্রামের মধ্যে বদ্ধিষ্ণু, কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইহাদের কাহারও মধ্যে সম্ভাব নাই। রেষারেষি ও মনোমালিন্ত লাগিয়াই আছে। দক্ষিণ-পাড়ার নীচে "কুষম বাম্নীর দ’ নামে একটি প্রকাও পুরাতন জলাশয়ের ভাগবাটোয়ার লইয়া উভয়-ঘরের মধ্যে আজ প্রায় দশ বৎসর পূর্বে প্রথম ঝগড়ার স্বত্রপাত হয়। বড়-তরফের সত্যনারায়ণ বস্ব একদিন সকালে লোকজন লইয়া সেখানে মাছ ধরিতে গিয়া দেখিলেন, ছোট-তরফের গদাধর বস্ব অপর পাড়ে তাহার পূর্বেই আসিয়া, জেলে নামাইয়। মাছ ধরিতেছেন। সত্যনারায়ণ বন্ধ কৈফিয়ৎ চাহিলেন – তিনি বর্তমানে তাহাকে জিজ্ঞাসা না করিয়া গদাধরের এমন আচরণের হেতু কি ? গদাধর তদুত্তরে যাহা বলিলেন, সত্যনারায়ণ ৰম্বর পক্ষে তা সম্মানজনক নয়। কথার মধ্যে একটা শ্লেষ ছিল, সত্যনারায়ণ বস্বর বড় ছেলে কলিকাতায় লেখাপড়া করিতে যাইয়া বকিয়া গিয়াছিল—তাহার শখের দেন। মিটাইতে সত্যনারায়ণকে সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রয় কোবালা করিয়া, চুয়াডাঙ্গায় কুণ্ডুদের গদি হইতে প্রায় হাজার দুই টাকা সংগ্ৰহ করিতে হয়। বন্ধ-বংশের এই শোঁখীন ছেলেটির কথা ঘুরাইয়া গদাধর এমনভাবে বলিলেন যাহাতে সত্যনারায়ণের মনে বড় বাজিল। দুজনের মধ্যে সেই হইতে মনোমালিন্তের স্থত্রপাত--- তারপর উভয়-তরফে ছোটবড় মামলা-মোকদ্দমা, এমন কি, ছোট-খাটো দাঙ্গা পৰ্য্যস্ত হইয়া গিয়াছে। মুখ দেখাদেখি অনেকদিন হইতে বন্ধ। . গদাধর বস্থর বয়স বত্রিশ তেত্রিশ। ম্যালেরিয়াগ্রস্থ চেহারা, রং শু্যামবর্ণ, তবে বস্বংশের দৈহিক ধারা অনুযায়ী বেশ দীর্ঘাকৃতি। ম্যালেরিয়ায় বছরের মধ্যে ছ'মাস ভূগিলেও গদাধরের শরীরে খাটিবার শক্তি যথেষ্ট । উভয়-তরফের মধ্যে র্তাহারই অবস্থা ভালো । আশপাশের গ্রাম হইতে স্ববিধ দরে পাট কিনিয়া মাড়োয়ারী মহাজনদের নিকট বেচিয়া হাতে বেশ দু’পয়সা করিয়াছেন। . এই গ্রামেরই বাহিরের মাঠে তাহার টিনের চালাওয়াল প্রকাও আড়ত। গ্রামের বাহিরে মাঠে আড়ত করিবার হেতু এই ষে, আড়তটি ষেস্থানে, সেটি ছুটি বড় রাস্তার সংযোগস্থল। একটি চুয়াডাঙ্গ যাইবার ডিস্ট্রিক বোর্ডের বড় রাস্তা, অপরটি লোকাল বোর্ডের কাচা রাস্তা, সেটি বাণপুর হইতে কৃষ্ণনগর পর্ষ্যস্ত গিয়াছে। চুয়াডাঙ্গা ও কৃষ্ণনগরগামী পাটের গাড়ী এখান দিয়াই যায়—পথের ধারে গাড়ী ধরিয়া পাট নামাইয়া লইবেন—এই উদ্বেপ্তেই এই উভয়-রাস্তার সংযোগস্থলে আড়ত-ঘর তৈরী। গদাধর বক্স বৎসরে বিস্তর পয়সা রোজগার করেন—অর্থাৎ কলিকাতার হিসাবে বিস্তর ন হইলেও পাড়াগা হিসাবে দেখিতে গেলে, বৎসরে পাচ-ছ' হাজার টাকা নিট মূনাফা সিন্মুকজাত করার সৌভাগ্য যাহার ঘটে—প্রতিবেশি-মহলে সে ঈর্ষার ও সম্বমের পাত্র। গদাধরের প্রকাও পৈতৃক বাড়ী বট-অশ্বখ গাছ গঙ্গাইয়া, খিলান ফাটিয়া, কানিশ ভাঙিয়া