পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Uή ο শতছিন্ন দারিদ্র্যের বাস্তব কাহিনীর মধ্যে দিয়েই স্বনিপুণ তুলিতে চিত্রিত করেছেন সেই বিশ্বাস বা অনুভূতি । গল্পগুলির সবচেয়ে বড় গুণ পড়তে পড়তে দুঃখে কষ্টে চোখে জল আসে না, সমবেদনায় মন ভরে ওঠে । কখন যে তাদের স্বখদু:খের ভাগীদার হয়ে, তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠেছি বুঝতে পারা যায় না। - go ‘সংসার’ গল্পটিতে এক ছন্নছাড়া গৃহস্থের শত দারিদ্র্য ও অভাবের মধ্যে স্বামী-পুত্ৰ-শ্বশুরকে নিয়ে হতভাগিনী বধুর একটি দিনের পূর্ণ সাংসারিক জীবনযাত্রার যে চিত্র একেছেন, ভাঙা ঘরে জ্যোৎস্নার আলোর মত, স্বর্গের মুখও তার কাছে তুচ্ছ ! "দাদু'র কাহিনী এক একশত বছরের বৃদ্ধের, ভীমরতির দরুন সকলের হেনস্থা ও অবহেলা সত্ত্বেও তার ছেলের একনিষ্ঠ ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছে বাপের প্রতি। সেখানে একই সঙ্গে আদর্শ পিতৃভক্তির চিত্র যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি সস্তানের প্রতি পিতৃহৃদয়ের অকৃত্রিম টান ও স্নেহের কথাও ভোলা যায় না। এই পিতৃভক্ত সস্তান যখন মারা গেল, শত বৎসর পরমায়ু নিয়ে সেই পিত। তখনও জীবিত, তখনও তিনি ভাবছেন—'হরিশ এলি না কি রে, “কোথা গেলি হরিশ’ ! হিঙের কচুরী’ ও ‘থনটন কাকা’ গল্প-দুটিতে মূখ্যতঃ কৃতজ্ঞতার বাণীই মুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানুষ ভোলে না তার স্নেহের ঋণ, একদিন যার কাছে যতটুকু পাক না কেন ! বাসা গায়ের মানুষের প্রতি প্রেম, ভালবাসা ও আকর্ষণের এক আন্তরিকতাপূর্ণ অকৃত্রিম প্রতিচ্ছবি । বন্দী’ গল্পটির নায়ক একজন নতুন কবি ও ঔপন্যাসিক, পল্লীগ্রামে তার প্রতিভার কেউ খবর রাখে না। পায়ে হেঁটে তাই সাত-আট মাইল পথ গিয়ে সাহিত্যিককে কৰিত শোনাতে যেতে হয়। অথচ এই কবি শিক্ষিত, এম-এ পাস, একদিন বিলাতে সাহিত্যের গবেষণা করতে পারে, মনে মনে তার কত আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। অর্থের অভাবে তার সে সাধ পূর্ণ হয় নি। বিদেশ-ভ্রমণের বাসনা এইভাবে ব্যক্ত হয়েছে—“বাল্যকাল থেকে কত সাধ ছিল, সন্ধ্যাবেলা মুরল্যাণ্ডে বেড়িয়ে বেড়াব, ক্রমে লেক দেখব । লর্ণ ডুন পড়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলুম কলেজে ডুন কাউন্টি দেখবো। ব্ল্যাকমুরের অমর কাহিনী—লিনটন, নিমাউথ, ইনফ্রাক—এসব কতদিনের স্বপ্ন ! হ’ল না । কোথায় ডেভনশায়ার লেনের সৌন্দর্য, কোথায় ডার্টমুর-—আর কোথায় পড়ে আছি চালতেপোতা গায়ে বাশবনে মশার কামড় খেয়ে !" ‘কুশল পাহাড়ী সর্বশেষ রচনা। এর বেশীর ভাগ গল্পেই যেন মৃত্যুর ছায়া পড়েছে। কোন-না-কোন কারণে নায়কের মৃত্যু ঘটছে দেখতে পাওয়া যায়। 'ঝগড়া" গল্পে দেখা যায় কেশব গাজুলী রিটায়ার করে বাড়ি বলেছিলেন। তারপর