পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&8b" বিভূতি-রচনাবলী গ্রামের সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ শেষ করিয়া গাঙ্গুলি-মশায় উঠানে গ্রাম্য তর্জা-জলের আসর পাতিয়া দিলেন। ঘুমে চোখ ভাডিয়া আসা সত্ত্বেও গদাধরকে রাত বারোটা পৰ্য্যস্ত বসিয়া তর্জা শুনিতে হইল—পাচ টাকা বকশিশও করিতে হইল—জমিদারী চাল বজায় রাখিতে । সকালে রওনা হইয়া গদাধর বেলা দশটার মধ্যে বাড়ী পৌছিয়া গেলেন । পাচ দিন মাত্র বাহিরে ছিলেন–যেন কতকাল বাড়ী ছাড়িয়াছেন, যেন কতকাল দেখেন নাই স্ত্রী-পুত্রকে। ছোট ছেলে টিপুকে দেখিয়া কাছে বসাইয়া আদর করিয়া তবে মনে হইল, নিজের বাড়ীতেই আসিয়াছেন বটে—কতকাল পরে যেন । অমঙ্গ আসিয়া বলিল—এতদিন থাকতে হবে ব'লে গেলে না তো ! ভালো ছিলে ? আমি কাল-পরশু কেবল ঘর-বার করেচি,—এই তুমি আসছে।” এই তুমি আসচে । তা, একটা খবরও তো দিতে হয় ! স্থজনে কেহ কখনও কাহাকে ফেলিয়া দীর্ঘদিন থাকে নাই, থাকিতে অভ্যস্ত নয়— নিতান্ত ঘরকোণা গৃহস্থ বলিয়া—পাচ দিনের অদর্শন ইহাদের পরস্পরের পক্ষে পাঁচ মাসের সমান । অনঙ্গ এই পাচ দিনের সমস্ত খুঁটিনাটি খবর জিজ্ঞাসা করিতে বসিল । সেখানে কি-রকম খাওয়া-দাওয়া, কে রাধিল, থাকার জায়গায় সুবিধা কেমন—ইত্যাদি। গদাধরও সবিস্তারে বর্ণনা করিতে লাগিলেন এই পাঁচ দিনের ব্যাপার—যেন তিনি কাশ্মীর ভ্রমণ সাঙ্গ করিয়া ফিরিলেন । অনঙ্গ বলিল—ক’দিন ভালো খাওয়া-দাওয়া হয় নি, আজ কি খাবে, বলে ? —যা হয় হবে, আগে একটু চা । —এত বেলায় ? সেখান থেকে চ খেয়ে বেরোও নি—গ ছুয়ে বলে তো ! —ওই অমনি এক পেয়ালা । —এখন আর চt খায় না । —৪ই তোমার দোষ। গরুর গাড়ীতে এলাম শরীর' ব্যথা ক’রে,—একটু গরম চা না হোলে••• ške —আচ্ছা, তবে আধ-পেয়ালা দেবো, তার বেশি কক্ষনো পাবে না। গদাধর এ-কথা বলিলেন না যে, গত পাচ-দিন কাছারি বাড়ীতে মনের সাধ মিটাইয়। এবেলা চার পেয়ালা, ওবেলা চার পেয়ালা প্রতিদিন চালাইয়াছেন । আজও সকালে আসিবার আগে দুটি পেয়ালা উজাড় করিয়া তবে গাড়িতে উঠিয়াছিলেন । অনঙ্গ চা আনিয়া দিয়া বলিল—নিৰ্ম্মল তোমার খুঁজে-খুঁজে হয়রান । —কেন ? —ত আমায় বলে নি, রোজ এসে বলে—বোঁদি, আজ এ খাওয়াও, বৌদি, আজ ও খাওয়াও—বিরক্ত করেচে ।