পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$48 বিভূতি-রচনাবলী অন্য কোনো মেয়েও তো শ্বশুরবাড়ীতে নাই । গদাধর একবার ভাবিলেন, বাড়ীতে গিয়া দেখিবেন নাকি ? পরক্ষণেই মুখ ফিরাইয়া গদির দিকে চলিলেন। দরকার নাই ওসব হাঙ্গামার মধ্যে এখন যাওয়ার। গদিতে গিয়াই লোক দিয়া পঞ্চাশটি টাকা স্ত্রীর নিকট পাঠাইয়া দিলেন। গদির কাজ শেষ হইতে এক রাত হইয়া গেল। গদাধর বাড়ী ফিরিবার পথে ভাবিলেন, যদি শালাটি বাড়িতে থাকে, তবে তো মুশকিল ! বড় শালাটি তাহার মধ্যে মধ্যে আসে বটে, কিন্তু গদাধরের সঙ্গে তার তত সম্ভাব নাই। থাকিলেও আতিথ্যের খাতিরে কথাবার্তা বলিতে হইবে—কিন্তু তিনি সেটা অপ্রীতিকর কৰ্ত্তব্য বলিয়া মনে করেন। তার চেয়ে নিৰ্ম্মলের বাড়ী বেড়াইয়া একটু রাত করিয়া ফেরা ভালো । নিৰ্ম্মল বলিল—কি ভাই, বড় ভাগ্যি যে আমার বাড়ী তুমি এসেছে ! —একটু দাবা খেলবে ? —খেলো। চা খাবে ? —নিশ্চয়ই । চা থাবো না কি-রকম ? নিৰ্ম্মলের অবস্থা ভালো নয়। পাচিল-ঘেরা উঠানের তিনদিকে তিনগুনি খড়ের ঘর, একখানি ছোট রান্নাম্বর—পিছদিকে পাতকুয়া ও গোয়াল। ঘরের আসবাবপত্রের অবস্থা হীন, তক্তপোশের উপর ময়লা কাথাপাত বিছানা। এতখানি রাত হইয়া গিয়াছে অথচ এখনও বিছানা কেহ পাট করিয়া পাতে নাই—সকালবেলার দিকে যে লেপখানা উন্টাইয়া ফেলিয়া বিছানা ছাড়িয়া লোক উঠিয়া গিয়াছে—সেখান এত রাত পৰ্য্যন্ত সেই একই অবস্থায় পড়িয়া। ইহাতে আরও মনে হয়, বাড়ীর মেয়েরা, বিশেষ গৃহকত্রী অগোছালো । গদাধরকে সেই তক্তপোশেরই একপাশে বসিতে হইল । নিৰ্ম্মল বলিল—ওহে, একটা কথা শুনেচে ? মঙ্গলগঞ্জের কুঠী-বাড়ী বিক্রি হচ্ছে! —কোথায় শুনলে ! —রাধানগর থেকে লোক গিয়েছিল আজ কোটের কাজে—সেখানে কার মুখে শুনেচে । —বেচবে কে ? —মালিকের ছেলে স্বয়ং। কিনে রাখে না, বাড়ীখান ! * —ধ্যাঃ ! আমি অত বড় বাড়ী কিনে কি করবে। তার ওপর পুরানো বাড়ী। একবার ভাঙতে শুরু হ’লে, সারাতে পাচ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে যাবে ! লোক নেই, জন নেই— নির্জন জায়গায় বাড়ী। ভূতের ভয়ে দিনমানেই গা ছমছম করবে। —আরে, না না—নদীর ওপর অমন খোলা আলো-ৰাতাসওয়ালা চমৎকার জায়গা। কিনে রাখে। সস্তায় হবে । আমার লোক আছে। —কি রকম ? —মালিকের ছেলের সঙ্গে আমার মামাতো-ভাই শচীনের খুব আলাপ | তাকে দিয়ে ধরতে পারি। в