পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኃዓ8 বিভূতি-রচনাবলী —এক জায়গায় যেতে হবে এখুনি । আড়তের কাজ-ফিরতে দেরি হতে পারে। আড়তের কাজ শুনিয়া অনঙ্গ আপত্তি করিল না—নহিলে ক্লাস্ত স্বামীকে সে কিছুতেই এখনি আবার বাহিরে যাইতে দিত না । গদাধর প্রথমে শচীনের বাসায় আসিয়া শুনিলেন, সে বাহির হইয়াগিয়াছে, কখন আসিবে, ঠিক নাই। গদাধর ঘড়ি দেখিলেন, আটটা বাজে। একা এত রাত্রে শোভারাণীর বাড়ী যাওয়া কি উচিত হইবে ? অথচ নিৰ্ম্মল কি এমন গুরুতর কাজ করিয়াছে, তাহা না জানিলেও তো তাহার স্বস্তি নাই । সাত-পাচ ভাবিয়া গদাধর একাই শোভারাণীর বাড়ী যাইবেন স্থির করিলেন। বাড়ীর নম্বর তিনি সেদিন দেখিয়াছেন,—নিশ্চয় বাহির করিতে কষ্ট হইবে না। বাড়ীর স্বতনিকটবর্তী হইতে লাগিলেন, বুকের মধ্যে ভীষণ টিপ-টিপ করিতে স্বরু করিল, জিভ যেন শুকাইয়া আসিতেছে, কান দিয়া ঝাল বাহির হইতেছে—বুকের ভিতরে তোলপাড় কিছুতে শাস্ত হয় না! এমন তো কখনো হয় নাই! গঙ্গাধর খানিকটা বিক্ষিত, খানিকটা खैौड छ्हेग्नां छेटैिरलम । অনেকখানি আসিয়া ঠিক করিলেন, থাকৃ আজ, সেখানে শচীনের সঙ্গে যাওয়াই ভালো । মহিলাদের সঙ্গে তেমন করিয়া আলাপ করা তাহার অভ্যাস নাই, কখনো করেন নাই—বড় বাধো-বাধো ঠেকে। তাছাড়া তিনি যদি কিছু মনে করেন ? কিন্তু গদাধর ফিরিতে পারিলেন না । উত্তেজনা ও ভয়ের পিছনে মনের গভীর গহনে একটা আনন্দের ও কৌতুহলের নেশা—সেটা চাপিয়া রাখা অসম্ভব। বাড়ী খুজিয়া বাহির করিয়া গদাধর খানিকক্ষণ বন্ধ দরজার সামনে চুপ করিয়া দাড়াইলেন। কড়া নাড়িবেন কি নাড়িবেন না ? চলিয়া যাওয়াই বোধহয় ভালো ! একবার চলিয়া স্বাইতে গিয়া আবার ফিরিয়া আসিলেন এবং মরীয়া হইয়াসজোরে কড়া নাড়া দিলেন। প্রথম দু'একবার নাড়াতে কেহ সাড়া দিল না। মিনিট তিন-চার পরে ছেকের চাকর আসিয়া দরজা খুলিয়া বলিল—কাকে চান আপনি ? গদাধর বলিলেন—মিস্ শোভারাণী মিত্র আছেন ? র্তাহার গলার স্বর র্কাপিয়া উঠিল। চাকর বলিল—হঁ্যা, আছেন। আপনার কি দরকার ? —আমার বিশেষ দরকার অাছে, একবার দেখা করবো । —কি নাম বলবো ? —বলে’, গদাধরবাৰু-শচীনের সঙ্গে যিনি এসেছিলেন। একটু পরে চাকর আবার ফিরিয়া আসিল, বলিল-চলুন ওপরে। উপরের হুল-স্বর পার হইয়া সেদিনের সেই কামরাতে চাকর তাহাকে লইয়া গেল। গদাধর গিয়া দেখিলেন, শোভা একটা ঈজিচেয়ারে শুইয়া কি বই পড়িতেছে—পাশে টিপয়ের উপর পেয়াল ও ডিস, বোধহয় এইমাত্র চা-পান শেষ করিয়াছে।