পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী و مbلا বসন্ত চলে গেল হায় রে,— চেয়েও দেখিনি তার পানে। গদাধরের কেবলি মনে হয়—ও গান তাহারি মনের কথা । জীবনের কতখানি কাটিয়া গেল.পৃথিবীতে এমন রূপ-রস-গন্ধ—তার কোনো পরিচয় তিনি পাইলেন না ! এখনো এখনো যদি কিছু পান। আজ এ আসরে শচীন তাহাকে জোর করিয়া ধরিয়া আনিয়াছে।—বলিয়াছে, ফিল্মের সকলে আসিবে —সকলের সঙ্গে আলাপ করেী—মেলামেশা করো—ভালো করিয়া দেখে, শুধু ব্যবসার দিক দিয়া। শচীনের সঙ্গে কত বার কত স্টুডিওয় তিনি গয়াছেন। আরো কজন ফিল্ম স্টারের সঙ্গে গদাধরের আলাপ-পরিচয় হইয়াছে। তাহাদের সকলকেই কত ভালো লাগে ! তাহারা যেন অন্য লোকের জীব ! গান আর সুর দিয়া তৈরী ! তাহারা সকলেই আছে। দোল-পূর্ণিমার রাত। বারোমাস খাটিয়া একটা দিন আমোদ না করিলে চলে ? এখানে আজ স্টুডিওর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আনন্দসম্মেলন। আজ রাত্রে এইখানেই গদাধরের ফিল্ম স্ট.ডিও খুলিবার কথাবাৰ্ত্ত হইবে, ঠিক আছে । বাগানটা বেশ বড়। বনেদী বহুকালের পুরানো প্রমোদ-কানন । মাঝখানে যে বাড়ী আছে—সেটা দোতলা । অনেকগুলি ঘর ওপরে নীচে, মেঝে মাৰ্ব্বেল পাথরে বাধানে। দেওয়ালে বিবর্ণপ্রায় বড় বড় অয়েলপেণ্টিং—অধিকাংশই নগ্ন নারী-স্মৃত্তির ছবি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে কোনো বিলাসী ধনীব্যক্তি শখ করিয়া বাগান-বাড়ী করাইয়া থাকিবেন ! সে অতীত ঐশ্বৰ্য্য ও শৌধীনতার চিহ্ন এর প্রতি ইষ্টকখণ্ডে। বাগান-বাড়ীর একটা ঘর তালাবদ্ধ। তার মধ্যে অনেক পুরানো বাসনপত্র, ঝাড়, কার্পেট, কোঁচ, কেদারা, আয়না প্রভৃতি গাদা করা। প্রবাদ এই, সেই ঘরে মাঝে-মাঝে, উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের ৮আনন্দনারায়ণ ঘোষকে চোগাচাপকান ও শামূলা পরিয়া একতাড়া কাগজ হাতে ঘুরিতে-ফিরিতে দেখা গিয়াছে। সেকালের বিখ্যাত এটনি আনন্দনারায়ণ ঘোষের নাম এখনও অনেকে জানেন । & পুকুর-ধারে শচীন বসিয়া ছিল—পাশে গদাধর এবং রেখা বলিয়া একটি মেয়ে। রেখা বলিতেছিল—আমাদের স্টুডিওতে আপনি রোজ বলেন যাবো,—যাবে।—কৈ, একদিনও গেলেন না তো ! গদাধর হঠাৎ জড়িতম্বরে বলিলেন—আড়ত থেকে বেরোই আর তোমাদের স্ট.ডিও বন্ধ হয়ে যায়—যাই কখন বলো, রেখা ? —না, আমার পার্টটা না দেখলে আপনি আমায় নেবেন কি ক’রে ? —আরে, তোমায় এমনিই নিয়ে নেবো, পার্ট দেখতে হবে না। চমৎকার চেহারা তোমার, তোমায় বাদ দিলে কি ক'রে হবে ?