পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দম্পতি ذة ج দিয়া বসিয়া অন্য-একটি মেয়ের সহিত গল্প করিতেছিল—দেখিয়া ভড়মশায় একটু সঙ্কুচিত হইয়া পড়িলেন। তিনি দরজা হইতে সরিয়া যাইতেছিলেন, মেয়েটি বলিল—কে ? ভড়মশায় বিনয়ে ও সঙ্কোচে গলিয়া বলিলেন--এই—অামি— চাকর পিছন হইতে বলিল—আড়তের লোক্স মেয়েটি বলিল—ও, আড়তের লোক ! তা তোমাকে ডেকেছিলাম কেন জানো—এবার ওরকম চাল দিয়েচে কেন ? ও চাল তুমি ফেরত নিয়ে যাও এবার—আর এক মণ কাটারি ভোগ পাঠিয়ে দিও—এখনি—বুঝলে ? ভড়মশাই ভয়ে-ভয়ে বলিলেন, তিনি চালের আড়ত হইতে আসেন নাই, গদাধর বম্বর গদি হইতে আসিয়াছেন । মেয়েটি কিছুক্ষণ র্তাহার দিকে চাহিয়া হাসিয়া ফেলিল, বলিল—তাই নাকি ! ও, বড় ভুল হয়ে গিয়েচে । কিছু মনে করবেন না, বস্থন আপনি । গদাধরবাবু এখন কোথায় ? —-আজ্ঞে, তিনি ভোটান ঘাট--- —ও, শুটিং হচ্ছে শুনেছিলাম বটে। এখনও ফেরেন নি ? —অজ্ঞে না । —আচ্ছ, ঠিকানাটা দিয়ে যান আপনি । একটু চা খাবেন ? —আজ্ঞে না, মাপ করবেন মা-লক্ষ্মী, আমি চা খাই নে । —শুমুন, আপনি আমার চিঠিখানা পড়েচেন তাহ’লে ? নইলে আমার ঠিকানা কোথায় পেলেন ? আমার পাওনা টাকাটার ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকদিন হলো। এক মাসের জন্যে নিয়ে আজি তিন মাস —আজ্ঞে, বাবু এলেই তিনি দিয়ে দেবেন। আপনি আর কিছুদিন সময় দিন দয়া করে। —আচ্ছ, আপনি ভাববেন না । এলে যেন একবার উনি আসেন এখানে, বলবেন তাকে। ভড়মশায় অনেক-কিছু ভাবিতে-ভাবিতে গদিতে ফিরিলেন। কে এ মেয়েটি ? হয়তো ভালো শ্রেণীর মেয়ে নয়, কিন্তু বেশ ভদ্র । যাহাই হউক, ইহার নিকট কৰ্ত্ত টাকা ধার করিতে গেলেন কেন, বৃদ্ধ তাহাও কিছু ভাবিয়া পাইলেন না। একবার ভাবিলেন, বৌ-ঠাকরুণকে সব খুলিয়া বলিবেন—শেষে ঠিক করিলেন, বৌ-ঠাকুরুণকে এখন কোনো কথা না বলাই ভালো হইবে। কি জানি, মনিব যদি শুনিয়া চটিয়া যান ? ইহার মাসখানেক পরে শোভারাণী একদিন একদিন হঠাৎ গদাধরকে সিড়ি দিয়া উপরে উঠিতে দেখিয়া বিস্মিত হইল । সকালবেলা। শোভারাণীর প্রাতঃস্নান এখনও সম্পন্ন হয় নাই। আলুথালু চুল, ফিকে নীল রংয়ের সিদ্ধের শাড়ী পরনে, হাতে ভোরের খবরের কাগজ। শোভা কিছু বলিবার পূর্বেই গদাধর বলিলেন—এই যে, ভালো আছে শোভা ? এই ট্রেন থেকে নেমেই তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলুম। এখনও বাড়ী বাই নি। o