পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিদ৭ Sέει ফুলশয্য। কাল থেকে দাদার কাছে শোকে ভয়-ভাবনা কিছুই থাকবে না। ছটফট করে মরছ, আমরা বুঝি নে বুঝি ? নববন্ধু সলজ্জ কণ্ঠে বললে—ওমা! ওই দিনটির পরে দীর্ঘ আটঘটি বছর কেটে গিয়েছে। আজ তের শ তিল্পান্ন সালের তেরই শ্রাবণ। অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট এন. রায়ের আজ মাতৃশ্ৰাদ্ধ। লোকজনে বাড়ী পরিপূর্ণ। - ভাবনহাটি গ্রামে এদের বড় দোতলা বাড়ী, বৈঠকখানা, পূজোর দালান। এন. রায়ের পিতা ৬পরমেশচন্দ্র রায়ের আমলে দুখান৷ মাত্র খড়ের চালাঘর ছিল। পরমেশ রায়ের অবস্থা সামান্তই ছিল । স্থানীয় জমিদারী কাছারিতে নায়েবী করে কষ্টেস্বষ্টে দুটি ছেলেকে মানুষ করে গিয়েছিলেন। চারটি মেয়েকেও মোটামুটি পাত্রস্থ করেছিলেন। বড় ছেলে নৃপেন্দ্রনাথ রায় জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন, আজ সাত আট বছর পেনশন নিয়েছেন। তার দুই ছেলে, একটি গত মহাযুদ্ধে আই এম. এস মেজর ছিল, এখন ভবানীপুরে ডাক্তারি করে । ছোটটি এই বছরে নিজে কনট্রাক্টরির আপিস খুলেছে কলকাতায় । বিগত যুদ্ধে ধানবাদ অঞ্চলে কনট্রাক্টরি করে অনেক টাকা রোজগার করেছে। ভবানীপুরে গোবিন্দ ঘোষাল লেনে সে গত ফাত্তন মাসে তেতলা প্রকাও বাড়ী কিনেছে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে । নৃপেন্দ্রনাথ রায় বকুলবাগানে বাড়ী করেছিলেন—ছোট একতলা বাড়ী বটে, তবে বেশ চওড়া কম্পাউগুওয়াল, ফুলবাগান আছে বাড়ীর সামনে । চাকরিজীবনের অর্থ দিয়ে বছর ধোল-সতের আগে এই বাড়ীটা তিনি করেছিলেন, এখন ছেলেরা এই বাড়ীতেই থাকে। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কলকাতাতেই। বলা বাহুল্য, সম্পন্ন ঘরেই। * নৃপেনবাবু চাকরি-জীবনের প্রথম দিকে পৈতৃক ভিটেতে এই বড় দোতলা বাড়ী করেন। পূজোর দালানে কয়েক বছর দুর্গোৎসবও করেছিলেন। তখন পরমেশ রায় বেঁচে ছিলেন। পিতার পরলোকগমনের পর নৃপ্লেনবাবু কয়েক বছর দেশে যাতায়াত করেছিলেন, তার পর আর বড় একটা আসতেন না । মাকে নিয়ে যেতে চাইতেন কৰ্ম্মস্থানে ; বৃদ্ধ বলতেন—না ধাবা, আমার কাছে শ্বশুরের এই ভিটেই গয়া কাশী । এ ফেলে কোথাও যাব না। বৌমার শরীর এখানে টেকে না ম্যালেরিয়াতে, বৌমাকে তুমি নিয়ে যাও সঙ্গে । - তখনও পর্য্যন্ত নৃপেনবাবু স্ত্রীকে বৃদ্ধ মায়ের কাছেই রেখেছিলেন। ব্যস, ভাবনহাটির বাস উঠে গেল। শুধু বুড়ি থাকে, বড় বাড়ীর ঘরে প্রদীপ দেয়। ছেলেদের তৈরি বাড়ী, কত আনন্দের, কত আহলাদের ! লোকের কাছে বলে স্থখ, দেখিয়েও সুখ । ছোট ছেলেও এই বাড়ী করতে টাকা দিয়েছে, দুই ভাইয়ের টাকাতে বাড়ী, তবে বড় খোক নৃপেন বেশি টাকা দিয়েছে। ছোট ছেলে বীরেন দাদা-শ্বশুরের পসারে বসে গোয়াড়ি কেষ্টনগরে ওকালতি