পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী عارج মোট চাদর ওঁর গায়ে ঢেকে দিলেন । —চাদর খুলবেন না বাবা, ঠাণ্ডা লাগবে । মা বকতেন—হল বাপের সেবা ? বাকবা, এমন কীৰ্ত্তিও কখনও দেখি নি । বাবা একটু লজ্জা ও সঙ্কোচের সঙ্গে বলতেন—আঃ, চুপ কর— —কেন চুপ করব ? বুড়ো বাপের আবাদার যেন ছ’বছরের খোকার আবদার—এমন কাও যদি কখনও দেখেছি। —না দেখেছ না দেখেছ, থাম তুমি । ঐ যে-কদিন বুড়ো আছে, তার পর আর— —সে সবাই জানে, তার পর কি আর তুমি বুনোপাড়ার দিগম্বর বুনোর সেবা করবে ? এস, দুটো খেয়ে নিয়ে আমার মাথা কিনবে এস । সেদিনই গভীর রাত্রে আমরা সবাই ঘুমিয়ে যখন, ঠাকুরদাদা নিজের ঘর খুলে হাতড়ে হাতড়ে বাইরের রোয়াকে এসে ডাকছেন—অ বেীমা, অ হরিশ– বাবা ধড়মড় করে উঠে বাইরে এসে বললেন—কি বাবা, কি হয়েছে ? কি হয়েছে ? —বাবা হরিশ ! —কি হয়েছে ? —বৌমা আমায় এখনও ভাত দিলে না। রাত কত হয়েছে দ্যাখ তো! আমি বসে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভাত হয় নি এখনও ? বাবা অবাক ! মা ঘুম-চোখে উঠে বললেন—কি ? —বাবা ভাত চাইছেন । —বাকবাঃ হাড়-মাস কালি হয়ে গেল । ঢের ঢের সংসার দেখেছি, ঢের ঢের শ্বশুর দেখেছি— কিন্তু এমন ধারা কাগুকারখানা কখনও শুনিও নি, কখনও দেখিও নি— —চেঁচালে কাজ চলবে ? ও কি ! সব সময়— - ইতিমধ্যে আমার নিৰ্ব্বিকার ঠাকুরদাদা, যিনি চোখে ভাল দেখেন না, কানেও ভাল শোনেন ন, আবার ডেকে উঠলেন–জ হরিশ! অ বোমা! } —যাই বাবা, যাচ্ছি । r —আমাকে ভাত দিয়ে যাও। খিদে পেয়েছে। বাবা গিয়ে ঠাকুরদাদাকে সাত্বনা দিতে লাগলেন—অবোধ শিশুকে যেমন লোকে সান্ধনা দেয়। তিনি খেয়েছেন সন্ধ্যার পরেই, তার বৌমা ভাত দিয়ে গিয়েছে মাগুর মাছের ঝোল দিয়ে। মনে নেই তার ? তাকে ভাত না দিয়ে কি বাড়ীর কেউ খেতে পারে? এখন রাত দুটো। এখন কি ভাত খেতে আছে ? এখন খেলে তার অস্কখ করবে। কাল সকালেই—খুব ভোরেই তাকে খেতে দেওয়া হবে, রাত তো ভোর হয়ে গেল । অমন করলে সবারই মনে কষ্ট দেওয়া হবে । অমন কি করা উচিত ? ছিঃ ! ঠাকুরদাদা বালকের মত আশ্বস্ত হয়ে বললেন—খেইছি ?