পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९१8 বিভূতি-রচনাবলী ঠাকুরদাদাকে না খাওয়ালে বাবার যেন তৃপ্তি হত না । আষাঢ় মাসে ঠাকুরদাদা জরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন। আর উঠতে পারেন না। বাবা তাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে মুখ ধুইয়ে কাপড় ছাড়িয়ে ওষুধ খাইয়ে দেন। বেদানার রস করে মিছরির গুড়ো মিশিয়ে খাওয়ান। কাছারি থেকে আসবার পথে ঠাকুরদাদার ঘরে কিছুক্ষণ বলে তবে এসে স্নানাহার করেন। কি উদ্বেগ তার ঠাকুরদাদার অস্বখের জন্যে ! মাকে বলতেন—বাবার জর কত? দেখেছিলে ? উনি তো ভুলে যান, ওষুধ ঠিকমত দেবে। পেরে উঠেও ঠাকুরদাদা প্রায় দু মাস বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারেন না। বাবা আজ ছাগলের দুধ, কাল কুমড়োর মেঠাই, পরশু আমলকির মোরব্বা—ষে যা বলে তাই যোগাড় করে নিয়ে এসে খাওয়ান, ঠাকুরদাদা গায়ে বল পাবেন বলে। ঠাকুরদাদাও হয়ে গেলেন একেবারে বালক । তার উৎপাতের জালায় বাড়ীম্বদ্ধ লোক অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। কেবল দিনরাত খাই-খাই আর একে ডাকছেন তাকে ডাকছেন। আমরা পারতপক্ষে কোন দিনই কেউ ঠাকুরদাদার ঘোষ বড় একটা নিই নে, এখন তো একেবারে ত্রিসীমানায় ঘোষি নে । দশ ডাক দিলে একবার উত্তর দিই কি না দিই। মা ভাতের থালা দিয়ে আসেন নিয়ে আসেন, এই পর্যন্ত । কথার জবাব দিলেও খুব হৃষ্টচিত্তে দেন না । যা দেন, তাও আবার অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত । অথচ সেই মা-ই নদীর ঘাটে বাড়ুজোগিনীর সঙ্গে এক ঘণ্টা ধরে হাবড়হাটি বকেন। ঠাকুরদাদা অসহায় শিশুর মত বাবার পথ চেয়ে বসে থাকেন। বাবার পায়ের শব্দ পেলেই স্বর ধরেন—অ হরিশ, এলি ? অ হরিশ ! আর ঠিক কি বাবার পায়ের শব্দ চেনেন ঠাকুরদাদা । বাবা এসে নিজে দেখাশুনো করবেন, নাওয়াবেন খাওয়াবেন ঠাকুরদাদাকে। বাবা এলেই ঠাকুরদাদা যত কিছু অভিযোগ শুরু কৃষ্ণুর দেবেন। তার কাছে ছেলেমামুষের মত—বেীমা আমাকে এ করে নি, আমাকে তা দেয় f । তাতে ঠাকুরদাদা মায়ের সহানুভূতি আরও হারাতেন । g বাবা তা জানতেনও । সেজন্যে নিজে সর্বদা খবরদারি করতেন। কারও হাতে ঠাকুরদাদাকে ছেড়ে দিয়ে বাবার বিশ্বাস হত না । দিদি ছাড়া। দিদি তো শ্বশুরবাড়ী চলে গিয়েছে। - পৌষ মাসে বাবা আবাদে গেলেন পৌষ কিস্তির খাজনা আদায় করতে। বার বার মাকে বলে গেলেন ঠাকুরদাদার যেন অযত্ন না হয় । মা বললেন—কেন, আমি কি বুড়োকে গলা টিপে মেরে ফেলব নাকি ? —ছি, অমন বলতে নেই । —না, তুমি সেই রকম কথাবার্তা বলছ কিনা তাই বলছি। তবে আমার , সংসায়ের ।