পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অথৈ জল §§ তুমি না লালমোহন কাকার মেয়ে ? কত ভাল লোক ছিলেন কাক, কত ধাৰ্ম্মিক ছিলেন—এ সব কথা মনে পড়ে না তোমার ? শাস্তি আবার কাদতে শুরু করলে । না, এ সব ছলনাময়ী ঘ্যানমেনে প্যানপ্যানে মেয়ের প্রতি আমার কোন সহানুভূতি জাগে না । পুনরায় কড়া স্বরে বললাম—আমার দ্বারা তোমার কোনো সাহায্য হবে এ তোমার আশা করাই অন্যায়। জানো, এ সবের প্রশ্ৰয় আমি দিই নে ? —আমার তবে কি উপায় হবে শশাঙ্কদা ? —আমি বলতে পারি নে। আমি চললাম, তোমার সঙ্গে এখানে দাড়িয়ে কথা বলবার সময় নেই আমার । বাড়ি এসে স্বরবালাকে সব বললাম। স্বরবালা বললে—ওই পোড়ারমূখীই যত নষ্টের গোড়া । রামপ্রসাদ ঠাকুরপোর কোন দোষ নেই। —তোমার এ কথা আমি মানলাম না । —মেয়েমানুষের ব্যাপার তুমি কি জানো ? তুমি শাস্তির কান্নাতে গলে গিয়েচো, ভাবচো ও বুঝি নিরীহ, আসলে তা নয়, এই তোমাকে বললাম। —তোমার যুক্তি আমি বুঝতে পারলাম না। —পারবেও না । ডাক্তারিই পড়েচ, আর কিছুই জান না সংসারের। রামপ্রসাদের উপর অত্যন্ত রাগ হোল । আমাদের গ্রামের মধ্যে এমন সব কাজ যে করতে সাহস করে, তাকে ভালভাবেই শিক্ষা দিতে হবে। দারোগাকে একখানা চিঠি লিখে পাঠলুম। দারোগ লিখলে—একদিন আপনাদের ওখানে গিয়ে লোকটাকে এমন জব্দ করে দেব যে, সে এ মুখে আর কোনদিন পা দেবে না। রামপ্রসাদ চাটুয্যে লোকটি মদ খায় বলে তার ওপর শ্রদ্ধা কোনদিনই ছিল না। কতদিন তাকে বলেছি—রামপ্রসাদদা, লিভারের অস্বথ হয়ে মরবে। এখনো মদ ছাড়ো । কোনদিন সে কথায় কান দেয় নি। বলতো—কোথায় মদ খাই বেশি ? তুমিও যেমন ভাই ! হাতে পয়সা কোথায় যে বেশি মদ খাবো ? অথচ সবাই জানে,রামপ্রসাদ অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে। রামপ্রসাদের বাবা হরিপ্রসাদ আবাদে কোন এক বড় জমিদারের নায়েৰী করে অনেক পয়সা রোজগার করে যথেষ্ট জায়গাজমি রেখে গিয়েছিলেন। হরিপ্রসাদের দুই বিবাহ ছিল, দ্বিতীয় পক্ষের তিনটি ছেলে এখনও নাবালক, বিমাতা বৰ্ত্তমান—রামপ্রসাদেরও নিজেরও দু-তিনটি মেয়ে। নাবালক বৈমাত্র ভাইগুলির স্বাধ্য সম্পত্তির উপস্বত্ব একা রামপ্রসাদষ্ট ফাকি দিয়ে ভোগ করে। এ নিয়েও ওকে আমি একদিন বলেছিলাম। আমি গ্রামে বসে থাকতে কোন অবিচার হোতে পারবে না | রামপ্রসাদ সে কথাতেও কান দেয় নি। দায়োগ আমার বাড়িতে এল। এসে বললে—আজই আপনাদের সেই লোকটাকে ডাকান তো ।