পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যোতিরিঙ্গণ Տ»Պ ভালুক ! পথের ধারেই দিনের বেলা ভালুকের ভয়! মেয়েরা ভয় পেয়ে গেলেন। আমরা কাছেই বসলাম কিছুক্ষণ, তার পর আবার গাড়ীতে উঠলাম । এবার কিছুদূর গিয়ে একটা বন্য গ্রাম পড়ল, নাম কাড়ীডোবা । ঘর কুড়ি-বাইশ মুণ্ড খৃষ্টানের বাস, মকাই ক্ষেতে কাজ করছে মেয়ের, বাঙালী মেয়ের মত শাড়ী পরনে। একটি মুণ্ডা যুবককে জিজ্ঞেস করলাম—কি নাম আছে ? 一呕1 —ও মেয়ের কি নাম ? —রত্নী কুই । একেবারে আধুনিক নাম—‘রত্ন’ । খৃষ্টান মিশনারীর ওদের লেখাপড় শিখিয়ে অনেকখানি বাইরের আলো দিয়েছে যে, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। রাস্তার দুধারে অবস্থিত সারবন্দী ওদের লাশ খড়ের ছোট নীচু ঘরগুলির মেঝে ও দাওয়া এলা মাটির রং করা, নিকানে। মোছানে!, দেওয়ালের বাইরে ধনেশপাখীর ছবি আঁকা, ভালুকের, পাঠাডের ও ফুলগাছের ছবি অঁক | ওদের ঘরের উঠোনে দাড়িয়ে ছেলে কোলে করে কৌতুহলের সঙ্গে বন্ত মেয়েরা একদৃষ্ট্রে আমাদের গাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে । একটি বৃদ্ধ গাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করলে—কুথাকার গাড়ী বটে ? --কালচিতি ।


কে আসছে সঙ্গে ? w

—ডাক্তারবাবু বটে । —হোই । আবার নির্জন বনপথ। একেবারে নির্জন। সন্ধ্যার পর বন্তহস্তিস্থ এ পথে বর্ষর ধানক্ষেতে নামে পাহাড় থেকে, পথের ধারে নরম মাটির বুকে তাদের পদচিহ্ন একে। সাদা মেঘপুঞ্জ থোলো থোলো জমেছে দূর শৈলমালার শিখরে শিখরে, কালিদাসের দেশের সামুমান আম্রকুটের ছবি মনে জাগিয়ে দেয়। সঙ্গে একখানি মেঘদূত যদি আনতাম, তবে ওই বন্ত কূটজবৃক্ষের তলায় পাহাড়ী নদীর পাড়ে পাথরের ওপর পা ছড়িয়ে বসে এমন মেঘমেদুর দিনের স্নিগ্ধ অপরাত্ত্বে সেই প্রাচীন ভারতবর্ষের মুখমন্থর দিনগুলির কথা পাঠ করতাম, আর শুনতাম ধলেশপাখীর ডাক, শুনতাম বনময়ূরের কেকাধনি ৷ শহরের দোতল ঘরে বৈদ্যুতিক বাতির তলায় ও কাব্য পড়ে কেউ ওর প্রাণস্পন্দন কানে শুনতে পারে না । অনেকদূর যাবার পরে আর একটা গ্রাম পড়ল, এর নাম টে'ড়াপানি । একেবারে সওতালি নাম, যে জায়গা থেকে জল দূরে ৷ বহুব্রীহি সমাস । এ গ্রামটিও খুব বড় নয়, খুব বড় গ্রাম ও অঞ্চলে বড় একটা নেই। এই গ্রামে একট দেখবার মত জিনিস আছে, সেটা হচ্ছে একটা পাথরের চকুতারা, তার চারদিকে পয়ঃপ্ৰণালী । বহু পুরনো আমলে এখানে নাকি প্রাণদণ্ডের আসামীদের শিরচ্ছেদ করা হত, রক্ত গড়িয়ে পড়ভ ঐ