পাতা:বিভূতি রচনাবলী (একাদশ খণ্ড).djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

cखांडिब्रित्रार्थ esë সন্ধান মিলবে না । লতা যেমন ঐ বাবলা গাছের আড়ালে হেলে পড়া স্বৰ্য্য থেকে শক্তি সঞ্চয় করছে, এখানে মন তেমনি উন্মুক্ত উদার বিপুল প্রকৃতি থেকে নতুন রস পান করে বলী হয়। বেলা পড়ে যাচ্ছে দেখে নোনা গাছের তলা থেকে উঠলুম। মাঠের মধ্যে তখন গাছপালার দীর্ঘ দীর্ঘ ছায়া পড়ে গেছে, বাবলা বনের ওপর সূৰ্য্য হেলে পড়েছে। চলতে চলতে আর একটা ঝোপের মাথা থেকে একটা বেগুনে রঙের অজানা বনফুল তুলে নিলুম। তার গর্তকেশরের চারিপাশ ছোট ছোট লাল লাল পিপড়েয় ভরা, তাদের সর্বাঙ্গ ফুটন্ত ফুলের পরাগে মাখামাখি,—মধু খেতে এসে তারা গাছের কি মহৎ উপকার করে যাচ্ছে । চেয়ে দেখলুম সে-রকম গাছ চারি পাশে আরও অনেক । সবগুলোতেই ফুল ফুটে আছে । আমি উদ্ভিদ-বিদ্যার ছাত্র নই, স্ত্রী-ফুল পুরুষ-ফুল চিনি নে, তা হলে ব্যাপারটা বেশি করে উপভোগ করতে পারতাম । ঝোপের মাথায় হলদে-পাখা প্রজাপতি উড়ছে। এই সব ছোট ছোট পোকামাকড় প্রজাপতি আর এই অখ্যাত অজ্ঞাত উদ্ভিদ-জগৎ পরস্পর অদ্ভুত কাৰ্য্য-কারণ সম্পর্কে আবদ্ধ, পরস্পরের উপর নির্ভর করছে । গাছপালা কঠিন মাটি থেকে, বায়ুমণ্ডল থেকে উপাদান সংগ্রহ করে নিজের দেহের মধ্যে অদ্ভুত কৌশলে খাদ্য তৈরি করছে প্রাণী-জগতের জীবনধারণের জন্যে—ওগুলো তো প্রাণী-জগৎকে খাদ্য যোগাবার একপ্রকার যন্ত্র । প্রাণী-জগৎ কত রকমে তাদের বংশবৃদ্ধির সাহায্য করছে ; আর সকলে মিলে নির্ভর করে আছে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরবর্তী ঐ বিরাট অগ্নিকুণ্ডটার ওপর। এই পাখী, এই প্রজাপতিটা, এই ফুল, এই তুচ্ছ কি গাছটা, এই লতা, এই আকাশ, বাতাস, জল, মাটি, ঐ যে উজ্জল হয়ে আসছে ঐ চাদটা, এই চারিধার, এই প্রাণী-জগং, ঐ লক্ষ মাইল দূরের স্বৰ্য্য, ঐ অনন্ত মহাব্যোম, এই বিপুল বিশাল অচিন্তনীয় অসীমতা, সবগুলোর মধ্যে পরস্পর কি আশ্চৰ্য্য নাড়ীর যোগ ! কি বিপুল রহস্তে ভরা তাদের এই পরস্পরনির্ভরতা ! মাঠের সামনে গ্রাম পড়ল। অড়হর ক্ষেতের চারিধারে ধঞ্চে গাছের বেড়া দিয়েছে। ওধারে ভুর-ভুর করে কোথা থেকে ফুটন্ত সরষে ফুলের গন্ধ আসছে। এদিকে বেড়ার গায়ে ক্ষুদে-ক্ষুদে ফুল ফুটে বেড়া আলো করে রেখেছে, গন্ধটায় বড় বাঝ । মাঝে মাঝে গাছে নাটা ফলের খোলো শুকিয়ে আছে। একঝাড় পাথরকুচি গাছের পরমায়ু ফুরিয়ে আসছে, তাদের পাতাগুলো সি দুরের রং হয়ে উঠছে। একটা ঘন আলকুশি লতার ঝোপের মধ্যে থেকে শীতের বৈকালের ঠাণ্ড গন্ধের সঙ্গে কি একটা ফুলের তীব্র ঘন স্বগন্ধ পাওয়া যাচ্ছে.মাথার উপর দিয়ে আকাশ বেয়ে এক ঝাক বালিহাস বাসার দিকে উড়ে চলেছে। কাশির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, গ্রামের ও-দিকের পথ বেয়ে দুজন র্যাপার-গায়ে জুতো-পায়ে ভদ্রলোক আসছেন। এখান থেকে অগ্রসর হওয়াই যুক্তিযুক্ত, এ রকম ঝোপের কাছে উদভ্ৰাস্ত ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখলে তারা আমাকে পাগল ঠাওরাবেন নিশ্চয়, কারণ বিনা কাজে মাঠের মধ্যে ঝোপের দিকে ই করে চেয়ে কেউ দাড়িয়ে আছে—এ দৃপ্তটা আমাদের দেশে একেবারেই আজগুবি । বি. র. ১১—২৪